মোসলিমা খাতুন,সারাদিন ডেস্ক:: বলিউডের তিন খানের দাপটের মাঝেও একের পর এক হিট ছবি দিয়ে চলেছেন অজয় দেবগন। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর অভিনীত ছবি গোলমাল অ্যাগেইন সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। তবে বক্স অফিসের হিসাব-নিকাশ কোনো কিছুই স্পর্শ করে না অজয়কে। তিনি শুধু মন দিয়ে নিজের কাজটা করে যান। বলিউডের সিংঘম অজয় দেবগনকে আবার দেখা যাবে এক দাপুটে চরিত্রে। গোলমাল অ্যাগেইন-এর সেই গোপাল এবার রাজকুমার গুপ্তা পরিচালিত রেইড ছবিতে দোর্দণ্ড প্রতাপ আয়কর দপ্তরের আধিকারিকের চরিত্রে। নিজের চরিত্র সম্পর্কে বলেন তিনি, ‘এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ খুব কমই হয়। রেইড ছবিতে আমার চরিত্রটা বাস্তবিক, আবার কমার্শিয়ালও। আর ইনকাম ট্যাক্সের রেইড নিয়ে আজ অবধি কোনো ছবি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে এই কৃতিত্ব পুরোপুরি সেই মানুষটার, যার ওপর এই ছবির গল্প বোনা হয়েছে। তাঁর মুখ থেকে তাঁর জীবনের রুদ্ধশ্বাস কাহিনি শুনে আমি অনুপ্রাণিত হই। তখনই স্থির করি, এই ছবিটা করতে হবে। আমি সেই ব্যক্তির নাম নিতে চাই না। তবে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে দারুণ লেগেছিল।
ছবিটি করতে গিয়ে আয়কর দপ্তরের অভিযানকে ঘিরে অনেক অজানা তথ্যের মুখোমুখি হন অজয়। আর এসব ঘটনা শিহরিত করেছে বলিউডের ‘সিংঘাম’কে। তিনি বলেন, ‘জানেন, রেইড ছবিটি করতে গিয়ে ইনকাম ট্যাক্সের রেইডকে ঘিরে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা জানতে পারি, যা আমাকে অবাক করে। আমার কাছে এক অন্য দুনিয়া খুলে যায়। আর এই ছবি না করলে আমি হয়তো জানতেই পারতাম না ভয়ংকর এসব ঘটনার কথা। আশির দশকে ইনকাম ট্যাক্স অফিসারদের খুন করে নর্দমায় ফেলে দেওয়া হতো।’
অজয় মনে করেন, আয়কর ফাঁকি দেওয়া এক সামাজিক অপরাধ। সবার সময়মতো সরকারকে কর দেওয়া উচিত বলে তিনি জানান। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার কথাও জানান অজয় হোটেল নভোটেলের এই আড্ডায়। তিনি বলেন, ‘তখন নব্বইয়ের দশক হবে, আমি নাসিকে একটা ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তখন আমার কাছে খবর আসে, বাড়িতে রেইড হয়েছে। বাড়িতে এসে ওরা তছনছ করে। আমি তাই ওদের বিরুদ্ধে মামলা করি। পরবর্তীকালে মামলাটা জিতে যাই।’ ইনকাম ট্যাক্সের মতো সমাজের গম্ভীর বিষয় নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কি কোনো বিরোধ হওয়ার আশঙ্কা আছে? বলিউডের এই সুপারস্টার বলেন, ‘না, এ ক্ষেত্রে বিরোধ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ, যে ব্যক্তির ওপর এই ছবি নির্মাণ করা হয়েছে, সবকিছু তাঁর সম্মতিতে হয়েছে। তিনি আমাদের গল্প দিয়েছেন। তাঁর নিজের জীবনের গল্প। এখানে অন্য কারও নাম নেওয়া হয়নি।’
তবে আজকাল ছবিকে ঘিরে তৈরি হওয়া অহেতুক বিশৃঙ্খলার জন্য সংবাদমাধ্যমকে দায়ী করেন অজয়। তাঁর মতে, সংবাদমাধ্যমগুলো এই রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে লেখা বন্ধ করলেই এরা আর প্রশ্রয় পায় না। ছবি প্রচারণার ক্ষেত্রে অন্যান্য নায়কের তুলনায় অজয় প্রায় নিষ্প্রভ। আগে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও খুব একটা কথাবার্তা বলতেন না এই বলিউড নায়ক। তবে লাজুক এই অভিনেতা এখন নিজেকে কিছুটা বদলেছেন। এই বদল কেমন লাগছে, তার জবাবে অজয় বলেন, ‘নিজের এই বদল আমারই খুব একটা পছন্দ হয়নি। তাই একটু তো কষ্ট হয়। আমি খুব একটা নিজেকে বদলাইনি বলে মনে হয়। আমি মনে করি না যে আমি বললেই সকলে ছবি দেখতে যাবেন। শুক্রবার দুপুরে ছবি মুক্তির পর দর্শক সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা কোন ছবি দেখবেন, আর কোন ছবি দেখবেন না। দর্শকই শেষ কথা।’
প্রায় তিন দশক ধরে একইভাবে বলিউডে রাজত্ব করছেন এই অভিনেতা। এত দিন ধরে স্টারডম ধরে রাখার রহস্য কী? অজয় হেসে বলেন, ‘কোনো রহস্য নেই। সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছে। এখন বিজ্ঞান বদলেছে, মানুষের জীবনযাত্রা বদলেছে, নানান ওষুধ এসেছে বাজারে। তাই মানুষ চাইলে আজ সুস্থ স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারে। আগে এত ম্যাচিওরড চরিত্র আসত না। এখন বয়স অনুযায়ী চরিত্র পাওয়া যায়। তাই অনেক ছবি করা যায়।’
ক্যারিয়ারের পাশাপাশি অজয়ের ব্যক্তিগত জীবনের কথাও উঠে এল এই আড্ডায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিয়ের ১৯ বছর পার করলেন অজয়-কাজল। বিবাহিত জীবনের প্রায় দুই দশক হতে চলল। এখনো কি মনে পড়ে সেই বিশেষ দিনটার কথা? সেই লাজুক হাসি হেসে বলিউডের সিংঘম জানান, ‘আরে, সেই দিনটার কথা ভুলি কী করে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে আমার আর কাজলের বিয়ে হয়। বাড়ির ছাদে আমরা বিয়ে করি। ঘরের বাইরে এসে বিয়ে করি আবার ঘরে ফিরে যাই।’ আর মধুচন্দ্রিমা কী রকম ছিল? বলিউডের এই প্রভাবশালী অভিনেতা বলেন, ‘হানিমুনের সময় আমরা প্রায় সারা দুনিয়া ঘুরে ফেলেছি। কাজলের ইচ্ছানুযায়ী এই প্ল্যান করা হয়েছিল। দুই মাসের ছুটি নিয়ে আমরা হানিমুনে যাই। কিন্তু এক মাস পর হানিমুন থেকে পালিয়ে আসি। দুই মাস কাজ ছেড়ে থাকা খুব কষ্টকর ছিল। হানিমুনের জন্য দুই মাস একটু বেশি সময় বলে মনে হয়েছিল।’আগের সাক্ষাৎকারে অজয় এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ভালো চিত্রনাট্য পেলে আবার কাজলের সঙ্গে জুটি বাঁধবেন। সে রকম কোনো চিত্রনাট্য পেলেন কি অজয়? এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘না, এখনো ভালো চিত্রনাট্যের সন্ধানে আছি। এখনো মনের মতো স্ক্রিপ্ট খুঁজে পাইনি।’ অজয়ের বাবা অ্যাকশন ডিরেক্টর বীরু দেবগনের কথাও উঠে আসে এদিন। বাবা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজ বাবার জন্যই আমার সবকিছু। প্রায় ৪০ বছর একইভাবে বলিউডকে শাসন করেছেন তিনি। তখন অ্যাকশন দৃশ্য করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। তখন কোনো সেফটি ছিল না। এখন স্ট্যান্ট করা অনেক সহজ। অ্যাকশন দৃশ্যের সময় এখন অনেক বেশি সতর্কতা নেওয়া যায়।’
বাবা হিসেবে অজয় কেমন, সশব্দে হেসে অজয় বলেন, ‘আমি আর কাজল দুজনেই শাসন করি। তবে আমি একটু প্রশ্রয় দিই বেশি। আমরা দুজনেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মূল্যবোধ শিখিয়েছি আমাদের সন্তানদের।’
মেয়ে নাইসাও কি বাবা-মায়ের পথে হাঁটবেন? তবে এখন নাইসার সিনেমাতে আসার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন অজয়। অজয়-কাজলের কন্যা এখন বিদেশে পড়তে গিয়েছেন। তাই পড়াশোনা নিয়েই এখন ব্যস্ত নাইসা। আগামী মাসে জন্মদিন বলিউডের এই সুপারস্টারের। প্রতিবারের মতো এবারও সাদামাটা ঘরোয়া জন্মদিন উদ্যাপন করবেন অজয়। কারণ, জন্মদিন তাঁর কাছে আর একটা সাধারণ দিন।
কিছুদিন আগে শ্রীদেবীর অকালপ্রয়াণ হয়। বলিউডের ‘চাঁদনি’র মৃত্যুকে ঘিরে শোকস্তব্ধ বলিউড। শ্রীদেবীর প্রসঙ্গ উঠতেই অজয়ের গলায় বেজে ওঠে হতাশার সুর। তিনিও মেনে নিতে পারেননি রূপ কি রানি-র এই আকস্মিক মৃত্যু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি যখন কলেজে পড়ি তখন শ্রীদেবী সুপারস্টার। আর তিনিই প্রথম মহিলা সুপারস্টার। আর তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। শ্রীদেবীর মতো অভিনেত্রী আর জন্মাবে না। আমি তাঁর অভিনীত প্রায় সব সিনেমাই দেখেছি। আমার প্রথম ছবি রিলিজের দিন শ্রীদেবীর লমহে মুক্তি পায়।’ শ্রীয়ের নাম মানেই অদ্ভুত এক বিষণ্নতা ঘিরে ধরে সবাইকে। তাই বিষণ্নতা দিয়েই এদিনের আড্ডার সমাপ্তি হলো। সঙ্গে রইল অজয়ের আগামী ছবি রেইড-এর জন্য একরাশ শুভেচ্ছা। ছবিটি ১৬ মার্চ মুক্তি পেতে চলেছে।