ঢাকা ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেশে দেশে বিপদ

ডেস্ক:: মহামারি করোনা ভাইরাসের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার হুট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পথে হাঁটছে না। বেশ সময় নিয়ে আগামী ৩০ মার্চ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার আগেই টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের। সকলকে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্য বিধি।

তবে পৃথিবীজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অধিকাংশ দেশেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবার আক্রান্ত কিছুটা কমলেই যারা খুলছে তাদের প্রতিটি দেশেই বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ। এমনকি করোনা প্রায় শূন্যে আসার পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপদের মুখে আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিটি দেশ।

সারাবিশ্বে করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে বিবেচিত ভারতের কেরালা থেকে শুরু করে ব্রিটেনসহ কোথাও ভাল নয় শিক্ষাঙ্গন খোলার পরিণতি।

বিশ্বব্যাপী করোনার গতি প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে রাখতে হবে করোনা আক্রান্তের হার আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা কমের দিকে এলেও এখনও কেউ ঝুঁকিমুক্ত নয়। কেবল তাই নয়, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ শিক্ষার ক্ষতির কথা চিন্তা করে হুট করেই শিক্ষাঙ্গন খুলেছে তাদের প্রত্যেককেই আবার তা বন্ধ করতে হচ্ছে আক্রান্ত নতুন করে বেড়ে যাওয়ার কারণে।

পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনবহুল ও উন্নত দেশও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পরিস্থিতি এখনও সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকেই। কারণ এখানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত প্রতিটি দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপদে পড়েছে যেসব দেশ-

ভারত: সারাবিশ্বে করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা। করোনা মোকাবেলায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে সারাবিশ্বে পরিচিত এখন ‘কেরালা মডেল’। কিন্তু সেই কেরালাও আক্রান্ত কমছে এই চিন্তা থেকে শিক্ষাঙ্গন খুলে নতুন করে বিপদে পড়েছে। কেরালায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের নেয়া শুরু হয়েছিল ক্লাসে। কিন্তু স্কুল খোলার পরই দুটি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্কুল দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কেবল দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়াদের ক্লাস খোলা হয়েছে। তারপরেও রাজ্যের মালাপ্পুরাম জেলায় পাশাপাশি দুটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ১৮৯ জন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে স্কুলে ৭০ জন শিক্ষক ও কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। মারানচেরিতে একটি সরকারী স্কুলের ১৫০ শিক্ষার্থী ও ৩৪ জন শিক্ষক এবং পুন্নানি এলাকার ভ্যান্নেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৯ শিক্ষার্থী এবং ৩৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রথমে এখানে একজন শিক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার পরই সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর করোনা টেস্ট করা হয়েছিল। তার পরেও কিভাবে একসঙ্গে এত শিক্ষক-শিক্ষার্থী কীভাবে আক্রান্ত হলেন এখন পর্যন্ত তার কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

এখানেই শেষ নয়, স্কুল খোলার পর নতুন করে করোনার ছোবলে পড়েছে মহারাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরাও। খোলার পর রাজ্যের এক স্কুল হোস্টেলের ২২৯ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ওই হোস্টেলের চার শিক্ষকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম জেলার দেগাঁওয়ের একটি আদিবাসীদের জন্য নির্মিত ভাবনা স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনা লক্ষণ পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা করে এবং ৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরে স্কুলের ক্লাস পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৩২৭ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২২৯ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত একটু কম হওয়ায় নানা স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিছুদিন আগে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ। তবে স্কুল খুলেই মহাবিপদে পড়ে প্রদেশটি। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসছে না। তাতেই ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৮২২ জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত একটু কমেছে-এই ভরসায় বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় অঞ্চল উড়িষ্যায় কিছু স্কুল খোলা হয়েছিল নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে। নয় মাস স্কুল বন্ধ ছিল এখানে। সঙ্কট কাটাতে তাই গজপতি জেলার একটি স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছিল দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর। তবে খোলার পরই আক্রান্ত হতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খোলে কোলকাতায়। সেখানেও স্কুল খোলার পরেই বিপত্তি। ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে কসবা চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলের এক শিক্ষক। একই সঙ্গে আরও অন্তত ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষ্য দেখা দেয়ায় দ্রুত স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র: করোনার মধ্যেই প্রথমে গত বছর জুলাইয়ে কিছু স্কুল খুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই স্কুল খোলার অনুমতি দিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। তবে প্রথম দু-সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিতর্কে পড়ে তখনকার ট্রাম্প প্রশাসন। এক পর্যায়ে ওইসব স্কুল আবার বন্ধ করতে হয়।

তবে আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত জুলাইয়ের ওই দু-সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা কম বলে যে দাবি করা হয় বিভিন্ন সময় আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের রিপোর্ট অনুসারে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

জিম্বাবুইয়ে: করোনা না সামলেই গেল বছরের শেষের দিকে স্কুল খুলেছিল জিম্বাবুইয়ে। তবে খোলার পরই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শ’ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। মতাবেলাল্যান্ড নর্থে সীমান্তবর্তী জন তলাচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের এ ঘটনা ঘটে। পরে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতালি: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ রেখে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল ইতালিতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল কার্যক্রম শুরু করে দেশটি। তবে পরবর্তীতে সরকারী হিসেবেই দেখা যায়, স্কুল খোলার আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত ১৩ হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ফ্রান্স: ফ্রান্সে স্কুল খোলার পরই ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ফ্রান্সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে। দীর্ঘ বন্ধের পর আবার যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু কিছু খোলা হয় তখনই বাঁধে বিপত্তি। ফ্রান্সে একদিকে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অন্যদিকে একেকটি শ্রেণীতে হাতেগোনা শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা হলেও আক্রান্ত হওয়া বন্ধ থাকেনি। খোলার আগে সিদ্ধান্ত হয়, কিছু দোকানপাট, প্রি-স্কুল এবং এলিমেন্টারি স্কুল খোলা হবে। সে ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় কোন ক্লাসে প্রি-স্কুল স্তরে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না এবং অন্য স্কুলের ক্লাসে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না। এমন কার্যকর পদক্ষেপেও রক্ষা হয়নি।

অস্ট্রিয়া: দীর্ঘ বন্ধের পর গেল বছরের শেষ দিকে খোলা হয়েছিল ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার স্কুল। তবে খোলার পরপরই রাজধানী ভিয়েনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় চার শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন সরকারি দপ্তরই বলেছিল, খোলার পরই আক্রান্ত হয়নি রাজধানী ভিয়েনায় এমন স্কুল কমই আছে।

স্পেন: স্পেনেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে খোলা হয়েছিল স্কুল। খোলার এক সপ্তাহের মাথায়ই অর্ধ শতাধিক স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ইসাবেল সেলা স্প্যানিশ জানান, ৫৩টি স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর কিছু কিছু স্কুল নতুন করে বন্ধ করা হয়। আবার কিছু কিছু স্কুল তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দিষ্ট শ্রেণীকক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়। সূত্র: জনকন্ঠ

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেশে দেশে বিপদ

আপডেট টাইম ০২:১৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ মার্চ ২০২১
ডেস্ক:: মহামারি করোনা ভাইরাসের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার হুট করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পথে হাঁটছে না। বেশ সময় নিয়ে আগামী ৩০ মার্চ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তার আগেই টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে শিক্ষক-কর্মচারীদের। সকলকে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্য বিধি।

তবে পৃথিবীজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অভিজ্ঞতা ভয়াবহ। অধিকাংশ দেশেই বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবার আক্রান্ত কিছুটা কমলেই যারা খুলছে তাদের প্রতিটি দেশেই বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ। এমনকি করোনা প্রায় শূন্যে আসার পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপদের মুখে আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিটি দেশ।

সারাবিশ্বে করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে বিবেচিত ভারতের কেরালা থেকে শুরু করে ব্রিটেনসহ কোথাও ভাল নয় শিক্ষাঙ্গন খোলার পরিণতি।

বিশ্বব্যাপী করোনার গতি প্রকৃতি বিবেচনায় নিয়ে দেশ ও বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনে রাখতে হবে করোনা আক্রান্তের হার আপাত দৃষ্টিতে কিছুটা কমের দিকে এলেও এখনও কেউ ঝুঁকিমুক্ত নয়। কেবল তাই নয়, একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, যেসব দেশ শিক্ষার ক্ষতির কথা চিন্তা করে হুট করেই শিক্ষাঙ্গন খুলেছে তাদের প্রত্যেককেই আবার তা বন্ধ করতে হচ্ছে আক্রান্ত নতুন করে বেড়ে যাওয়ার কারণে।

পৃথিবীর সবচেয়ে কম জনবহুল ও উন্নত দেশও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে পরিস্থিতি এখনও সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সতর্ক হতে হবে বাংলাদেশকেই। কারণ এখানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা উন্নত প্রতিটি দেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিপদে পড়েছে যেসব দেশ-

ভারত: সারাবিশ্বে করোনা মোকাবেলায় মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছ ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালা। করোনা মোকাবেলায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে সারাবিশ্বে পরিচিত এখন ‘কেরালা মডেল’। কিন্তু সেই কেরালাও আক্রান্ত কমছে এই চিন্তা থেকে শিক্ষাঙ্গন খুলে নতুন করে বিপদে পড়েছে। কেরালায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই শিক্ষার্থীদের নেয়া শুরু হয়েছিল ক্লাসে। কিন্তু স্কুল খোলার পরই দুটি সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্কুল দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কেবল দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়াদের ক্লাস খোলা হয়েছে। তারপরেও রাজ্যের মালাপ্পুরাম জেলায় পাশাপাশি দুটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ১৮৯ জন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়। একই সঙ্গে স্কুলে ৭০ জন শিক্ষক ও কর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। মারানচেরিতে একটি সরকারী স্কুলের ১৫০ শিক্ষার্থী ও ৩৪ জন শিক্ষক এবং পুন্নানি এলাকার ভ্যান্নেরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৯ শিক্ষার্থী এবং ৩৬ শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, প্রথমে এখানে একজন শিক্ষার্থী শনাক্ত হওয়ার পরই সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর করোনা টেস্ট করা হয়েছিল। তার পরেও কিভাবে একসঙ্গে এত শিক্ষক-শিক্ষার্থী কীভাবে আক্রান্ত হলেন এখন পর্যন্ত তার কোন কূলকিনারা করতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

এখানেই শেষ নয়, স্কুল খোলার পর নতুন করে করোনার ছোবলে পড়েছে মহারাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরাও। খোলার পর রাজ্যের এক স্কুল হোস্টেলের ২২৯ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে ওই হোস্টেলের চার শিক্ষকও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম জেলার দেগাঁওয়ের একটি আদিবাসীদের জন্য নির্মিত ভাবনা স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে করোনা লক্ষণ পাওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের করোনা পরীক্ষা করে এবং ৩০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরে স্কুলের ক্লাস পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ৩২৭ শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ২২৯ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়।

আক্রান্ত একটু কম হওয়ায় নানা স্বাস্থ্য বিধি মেনে কিছুদিন আগে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু করেছিল অন্ধ্রপ্রদেশ। তবে স্কুল খুলেই মহাবিপদে পড়ে প্রদেশটি। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসছে না। তাতেই ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী এবং ৮২২ জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত একটু কমেছে-এই ভরসায় বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় অঞ্চল উড়িষ্যায় কিছু স্কুল খোলা হয়েছিল নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে। নয় মাস স্কুল বন্ধ ছিল এখানে। সঙ্কট কাটাতে তাই গজপতি জেলার একটি স্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছিল দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর। তবে খোলার পরই আক্রান্ত হতে থাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মেনে কেবল নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল খোলে কোলকাতায়। সেখানেও স্কুল খোলার পরেই বিপত্তি। ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে কসবা চিত্তরঞ্জন হাই স্কুলের এক শিক্ষক। একই সঙ্গে আরও অন্তত ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর করোনার লক্ষ্য দেখা দেয়ায় দ্রুত স্কুলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র: করোনার মধ্যেই প্রথমে গত বছর জুলাইয়ে কিছু স্কুল খুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই স্কুল খোলার অনুমতি দিয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। তবে প্রথম দু-সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিতর্কে পড়ে তখনকার ট্রাম্প প্রশাসন। এক পর্যায়ে ওইসব স্কুল আবার বন্ধ করতে হয়।

তবে আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘গত জুলাইয়ের ওই দু-সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রবণতা কম বলে যে দাবি করা হয় বিভিন্ন সময় আমেরিকান এ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের রিপোর্ট অনুসারে তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়।

জিম্বাবুইয়ে: করোনা না সামলেই গেল বছরের শেষের দিকে স্কুল খুলেছিল জিম্বাবুইয়ে। তবে খোলার পরই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে এক শ’ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। মতাবেলাল্যান্ড নর্থে সীমান্তবর্তী জন তলাচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের এ ঘটনা ঘটে। পরে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতালি: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ রেখে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল ইতালিতে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্কুল কার্যক্রম শুরু করে দেশটি। তবে পরবর্তীতে সরকারী হিসেবেই দেখা যায়, স্কুল খোলার আগে ও পরে মিলিয়ে অন্তত ১৩ হাজার স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

ফ্রান্স: ফ্রান্সে স্কুল খোলার পরই ৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। ফ্রান্সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে। দীর্ঘ বন্ধের পর আবার যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু কিছু খোলা হয় তখনই বাঁধে বিপত্তি। ফ্রান্সে একদিকে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি অন্যদিকে একেকটি শ্রেণীতে হাতেগোনা শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা হলেও আক্রান্ত হওয়া বন্ধ থাকেনি। খোলার আগে সিদ্ধান্ত হয়, কিছু দোকানপাট, প্রি-স্কুল এবং এলিমেন্টারি স্কুল খোলা হবে। সে ক্ষেত্রে ঠিক করা হয় কোন ক্লাসে প্রি-স্কুল স্তরে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকবে না এবং অন্য স্কুলের ক্লাসে ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকতে পারবে না। এমন কার্যকর পদক্ষেপেও রক্ষা হয়নি।

অস্ট্রিয়া: দীর্ঘ বন্ধের পর গেল বছরের শেষ দিকে খোলা হয়েছিল ইউরোপের দেশ অস্ট্রিয়ার স্কুল। তবে খোলার পরপরই রাজধানী ভিয়েনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় চার শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন সরকারি দপ্তরই বলেছিল, খোলার পরই আক্রান্ত হয়নি রাজধানী ভিয়েনায় এমন স্কুল কমই আছে।

স্পেন: স্পেনেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে খোলা হয়েছিল স্কুল। খোলার এক সপ্তাহের মাথায়ই অর্ধ শতাধিক স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। পরে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ইসাবেল সেলা স্প্যানিশ জানান, ৫৩টি স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর কিছু কিছু স্কুল নতুন করে বন্ধ করা হয়। আবার কিছু কিছু স্কুল তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের নির্দিষ্ট শ্রেণীকক্ষে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়। সূত্র: জনকন্ঠ