ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত ড. মো. হারুনুর রশীদ পরিচালিত সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া বুধা’ মুক্তি পেয়েছে ভাল মানুষ থেকেইে ভাল মানুষ তৈরী হয়—ঠাকুরগাঁওয়ে আল-হাসানাহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান ঠাকুরগাঁয়ে যুবলীগ নেতার পলিথিন কারখানা বন্ধ, মালামাল জব্দ সাগর-রুনি হত্যা মামলা র‌্যাব থেকে তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইয়ের কাছে সংস্কারের পরেই নির্বাচন: ড. ইউনূস বশিরউদ্দীন ও ফারুকীকে কার বুদ্ধিতে নিলেন, প্রশ্ন মান্নার ভূমি সেবায় দুর্নীতি-অনিয়মে তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা ভোট কারচুপির তদন্ত সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম আসিফ নজরুলকে হেনস্তা,দূতাবাসের কাউন্সেলরকে দেশে ফেরত, চাকরি হারাচ্ছেন স্টাফ

সাংবাদিকতার অতীত বর্তমান এবং পেশাদারিত্ব; যে কথা আপনার অজানা

সম্ভবত দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত শ্রেণির মানুষের একটা তালিকা করলে তাতে বেশ উপরের দিকেই থাকবে সাংবাদিক শ্রেণীর নাম। এটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাংবাদিক শ্রেণির প্রতি মানুষের প্রত্যাশার পারদ সবসময়েই কিছুটা উর্ধ্বমুখী। সে তুলনায় সাংবাদিক সমাজ সেই কাজ করতে না পারলে রোষানলে পড়বে এটাই নিয়তি। কমেন্টবক্সে বা নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাঝে অনেক সাংবাদিকের প্রতি অনেক ক্ষোভ বিদ্বেষ আপনার থাকতেই পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একজন সাংবাদিকের দিন কেমন যায়? কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় আপনার ভেতরকার একজন মানুষের নিজস্ব আবেগ? আজকের গল্পটা সংবাদ ঘিরে নয়। সাংবাদিক ঘিরে।

একেবারেই তরতাজা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম আটক। ইতোমধ্যে সারা দেশের মানুষ এই ঘটনা জানেন। আদ্যোপান্ত সবই আপনারা জানেন। সেই গল্পের কথা বলে লাভ নেই। আসুন কিছু অন্য দিক দেখা যাক। সাংবাদিক রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকের ঠিক পরের চিত্র কেমন ছিলো? যদি টাইম ফ্রেম অনুযায়ী ভাগ করি, তবে প্রথম এই সংবাদ আসে রাত সাড়ে নটা থেকে দশটার মাঝে। প্রথম অবস্থায় সাধারণ জনগণ রীতিমতো খুশিই ছিলেন। ‘এবার একজনকে বাগে পাওয়া গিয়েছে। সাংবাদিক খুব বেড়েছে।’ মোটামুটি এমন একটা অবস্থা নিয়েই রাতের প্রথম প্রহর পুরোটা গেল। রাত সাড়ে বারটা কিংবা একটার কিছু পর দেখা গেল, রোজিনা ইসলামের বিগত কয়েকদিনের রীতিমতো তোলপাড় করে ফেলার মত কিছু কাজ আছে, যেটা সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একেবারে অনিয়মের মূল দর্পণ। জনগণের সুর কিছুটা নরম হলো। সাংবাদিক অনেক উচিত এক কাজ করছেন, রাষ্ট্র মানুষের কণ্ঠরোধ করছে ধরণের বাণী এবার ভেসে এলো। তবে এদের মাঝে এখনো সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এখনো পর্যন্ত সাংবাদিক গ্রেফতারে উপযুক্ত কাজ হয়েছে বলেই বিশ্বাস করছেন।

প্রিজন ভ্যানে রোজিনা ইসলাম

এই ব্যাপারে লিখতে গিয়েই সামনে আসছে দেশের অতীত। একটা সময় মাহমুদুর রহমানের মত গুণী সাংবাদিকদেরও দেশে ব্যাপক আকারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে তখন কিছু কেন বলা হয়নি। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছিল মাহমুদুর রহমানকে। হ্যাঁ। এই একটা দায় আজকের দিনে এসে সাংবাদিক সমাজকে নিতেই হবে। সেদিন সত্যিকার অর্থেই একজন মাহমুদুর রহমানের পাশে কেউই ছিলো না। হাতেগোণা কয়েকটি মিডিয়া হাউজ ব্যাতীত কারোরই ভ্রুক্ষেপ ছিল না তার ব্যাপারে। ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’ কথাটা আজকের দিনে এসে সত্য। তবে দায় কি শুধুই সাংবাদিক সমাজের?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে পুরো দায় সাংবাদিক সমাজকে দিতে রাজি নই। কোন সাংবাদিকই দিবেন না। কোন যুক্তি দিয়ে চিন্ত করা মানুষ পুরো দায় সাংবাদিকের উপর দিতে পারবেন না। সময়টা চিন্তা করুন। ২০১৩ সাল। খুব বেশি আগের কথা নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। আমার হাতে কোন ফোন ছিল না এবং আমার মত একটা সচেতন মধ্যবিত্ত পরিবারের কারোর হাতেই তখন ফোন ছিল না। স্মার্টফোন তখনো বিলাসিতা। আমাদের দেশে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও এর জন্ম আজকের একদিনে নয়। ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য প্রযুক্তি আইনকে ২০১৩ সালেই অনেক বেশি কঠোর করা হয়। আজকের দিনে প্রতিবাদের বড় অংশ জুড়ে যেখানে ওয়েব পোর্টাল এবং স্ট্যাটাস। ২০১৩ সালে পরিবেশ কি আসলেই তেমন ছিল?
পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে কি বলে?

সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান

২০১৫ সালের জাতিসংঘের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং ইউনেসকোর ‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড’ এর তথ্য অনুয়ায়ী সেই বছর (২০১৫ সাল) বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বা দেড় কোটি জনগণ ইন্টারনেট পরিসেবার আওতায় ছিল। ২০১৮ সালের মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংস্থা জিএসএমএ জানায়, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ। যদিও সরকারের হিসেব ছিল ৮ কোটি ৮ লাখ। মানে মোটা দাগে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেট কি তা ২০১৮ সালেই জানতেন না।

তার অর্থ যদি হিসেব করি, ২০১৩ সালে ফেসবুক, টুইটার সহ সবকিছুই আজকের দিনের চেয়ে নাজুক ছিল। আসুন দেখি, আজকের দিনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কত? ২০২০ সালের ২ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১১ কোটির বেশি। অন্য একটি সূত্র জানায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ। ২০১৫ সালে যা মেরেকেটে ১০ শতাংশও ছিল না। তার মানে কেবল ৬ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছেন। মাহমুদুর রহমান সাহেবের জন্য প্রতিবাদ না হবার এটাও কি বড় কারণ নয়?

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির খন্ডচিত্র

আসুন এবার সংবাদপত্রের হিসেব করি। একটু কষ্ট করে গুগল করলেই দেখতে পাবেন ২০১৩ সালের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিজেদের প্রচারণা আর অনলাইনে খবর পড়ার গুরত্ব তুলে ধরতেই ব্যস্ত। আসলেই কত সংখ্যক পোর্টাল ছিল? তা জানা প্রায় অসম্ভব। তবে সংখ্যাটি যে ১০০ এর নিচে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তথ্য হালনাগাদ সে সময়ে অতখানিই কঠিন ছিল। আর বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজারের বেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কাজ করে চলেছে। মাহমুদুর রহমান সাহেবের জন্য সে সময়টা আসলেই কঠিন ছিল।

এবার আসা যাক বর্তমানের সাংবাদিকতা নিয়ে। দেশের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেন, সাংবাদিক মানেই দালাল, পা চাটা, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সত্য কথা হলো, পেশাদারিত্ব অনেক বড় এক জিনিস। যেটার কাছে সাংবাদিকরা প্রায়ই বলি হন। সাংবাদিকের কাজ সর্বক্ষেত্রে মতামত দেয়া নয়, তথ্য প্রকাশ করা। কিছুক্ষেত্রে তাতে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়। যেমনটা রোজিনা ইসলাম দিয়েছে। তবে সবসময়ই ঘটনার মূলে যাওয়া সম্ভব না। এটিও বিবেচনায় রাখা দরকার। মাওলানা মামুনুল হকের মত একজন ব্যক্তিত্বের পূর্বের জীবন কেমন ছিল সেটা অতীতে গিয়ে দেখা সম্ভব নয়। কেবল বিশ্বাসের ব্যাপার। আমার সেই বিশ্বাস দিয়ে সংবাদ পরিবেশন চলে না। মতামত দেয়া চলে, কলাম দেয়া যায়। মতামত দেয়া সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। এই লেখাটি সম্পূর্ণভাবে মতামত অংশের একটি লেখা। এখানে একজন গণমাধ্যমকর্মী নিজস্ব চিন্তাধারার সম্পূর্ণটাই প্রকাশ করতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবেই বরং প্রকাশ করা যাক।

দেশের সাম্প্রতিক বড় একটি ঘটনা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা। একজন সাংবাদিক যে মতেরই হোক না কেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় তাকে ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করা দরকার, যেমনটা ঘটছে। যেকোন আলেম নারীঘটিত অপরাধে জড়িত এটা বিশ্বাস না করলেও একজন সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনের বেলায় মামলায় যেমন উল্লেখ আছে তেমন কথাই লিখবেন। কিন্তু যখন কোন মতামত প্রকাশ করা হবে, তখন তিনি যুক্তি দ্বারা নিজের যা বিশ্বাস সেটাই প্রকাশ করবেন,

যাচাই করে সংবাদ পড়ুন

এক্ষেত্রে দেশের কিছু মিডিয়ার কথা উঠে আসে। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনের নামে নিজস্ব চিন্তাধারা এবং একটি মহলের বিষেদগার করতেই ব্যস্ত। কিন্তু তাদের সংখ্যা কত? বাংলাদেশের ২৫/২৬ টি টিভি চ্যানেলের মাঝে হাতে গোণা ৫/৬ চ্যানেলের এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ বা মতাদর্শ পরিদর্শনের মত কাজে লিপ্ত হতে দেখা যায়। আর যুগ যেহেতু ট্রেন্ড কিংবা স্রোতে গা ভাসিয়ে চলার পক্ষে। তাই সেসবই আমাদের ফেইসবুক নিউজফিডে জায়গা করে নেয় বেশি। হয় ভাইরাল! কিন্তু সচেতন নাগরিক সমাজ কি পারতো না সচেতন ভাবেই এমন সংবাদমাধ্যম পরিহার করতে?

এই লেখার উদ্দেশ্য কোনভাবেই সর্বক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সমর্থন করা নয়। অবশ্যই যারা সাংবাদিকতার নামে কেবল এক বৃত্তে আটকে থেকে বিষেদগার করে চলেছে তারা বর্জনীয়। তারা নিন্দার পাত্র। তবে কিছুক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যে পরিমাণ অপদস্থ করা হয় সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে, সাংবাদিক সমাজের সেটা প্রাপ্য না। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

জুবায়ের আহাম্মেদ
ফেস দ্যা পিপল

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

দুর্নীতির অভিযোগে পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

সাংবাদিকতার অতীত বর্তমান এবং পেশাদারিত্ব; যে কথা আপনার অজানা

আপডেট টাইম ০১:০৫:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অগাস্ট ২০২১

সম্ভবত দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত শ্রেণির মানুষের একটা তালিকা করলে তাতে বেশ উপরের দিকেই থাকবে সাংবাদিক শ্রেণীর নাম। এটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাংবাদিক শ্রেণির প্রতি মানুষের প্রত্যাশার পারদ সবসময়েই কিছুটা উর্ধ্বমুখী। সে তুলনায় সাংবাদিক সমাজ সেই কাজ করতে না পারলে রোষানলে পড়বে এটাই নিয়তি। কমেন্টবক্সে বা নিজের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের মাঝে অনেক সাংবাদিকের প্রতি অনেক ক্ষোভ বিদ্বেষ আপনার থাকতেই পারে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একজন সাংবাদিকের দিন কেমন যায়? কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় আপনার ভেতরকার একজন মানুষের নিজস্ব আবেগ? আজকের গল্পটা সংবাদ ঘিরে নয়। সাংবাদিক ঘিরে।

একেবারেই তরতাজা ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম আটক। ইতোমধ্যে সারা দেশের মানুষ এই ঘটনা জানেন। আদ্যোপান্ত সবই আপনারা জানেন। সেই গল্পের কথা বলে লাভ নেই। আসুন কিছু অন্য দিক দেখা যাক। সাংবাদিক রোজিনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকের ঠিক পরের চিত্র কেমন ছিলো? যদি টাইম ফ্রেম অনুযায়ী ভাগ করি, তবে প্রথম এই সংবাদ আসে রাত সাড়ে নটা থেকে দশটার মাঝে। প্রথম অবস্থায় সাধারণ জনগণ রীতিমতো খুশিই ছিলেন। ‘এবার একজনকে বাগে পাওয়া গিয়েছে। সাংবাদিক খুব বেড়েছে।’ মোটামুটি এমন একটা অবস্থা নিয়েই রাতের প্রথম প্রহর পুরোটা গেল। রাত সাড়ে বারটা কিংবা একটার কিছু পর দেখা গেল, রোজিনা ইসলামের বিগত কয়েকদিনের রীতিমতো তোলপাড় করে ফেলার মত কিছু কাজ আছে, যেটা সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একেবারে অনিয়মের মূল দর্পণ। জনগণের সুর কিছুটা নরম হলো। সাংবাদিক অনেক উচিত এক কাজ করছেন, রাষ্ট্র মানুষের কণ্ঠরোধ করছে ধরণের বাণী এবার ভেসে এলো। তবে এদের মাঝে এখনো সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এখনো পর্যন্ত সাংবাদিক গ্রেফতারে উপযুক্ত কাজ হয়েছে বলেই বিশ্বাস করছেন।

প্রিজন ভ্যানে রোজিনা ইসলাম

এই ব্যাপারে লিখতে গিয়েই সামনে আসছে দেশের অতীত। একটা সময় মাহমুদুর রহমানের মত গুণী সাংবাদিকদেরও দেশে ব্যাপক আকারে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে তখন কিছু কেন বলা হয়নি। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছিল মাহমুদুর রহমানকে। হ্যাঁ। এই একটা দায় আজকের দিনে এসে সাংবাদিক সমাজকে নিতেই হবে। সেদিন সত্যিকার অর্থেই একজন মাহমুদুর রহমানের পাশে কেউই ছিলো না। হাতেগোণা কয়েকটি মিডিয়া হাউজ ব্যাতীত কারোরই ভ্রুক্ষেপ ছিল না তার ব্যাপারে। ‘দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’ কথাটা আজকের দিনে এসে সত্য। তবে দায় কি শুধুই সাংবাদিক সমাজের?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে পুরো দায় সাংবাদিক সমাজকে দিতে রাজি নই। কোন সাংবাদিকই দিবেন না। কোন যুক্তি দিয়ে চিন্ত করা মানুষ পুরো দায় সাংবাদিকের উপর দিতে পারবেন না। সময়টা চিন্তা করুন। ২০১৩ সাল। খুব বেশি আগের কথা নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। আমার হাতে কোন ফোন ছিল না এবং আমার মত একটা সচেতন মধ্যবিত্ত পরিবারের কারোর হাতেই তখন ফোন ছিল না। স্মার্টফোন তখনো বিলাসিতা। আমাদের দেশে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকলেও এর জন্ম আজকের একদিনে নয়। ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য প্রযুক্তি আইনকে ২০১৩ সালেই অনেক বেশি কঠোর করা হয়। আজকের দিনে প্রতিবাদের বড় অংশ জুড়ে যেখানে ওয়েব পোর্টাল এবং স্ট্যাটাস। ২০১৩ সালে পরিবেশ কি আসলেই তেমন ছিল?
পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে কি বলে?

সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান

২০১৫ সালের জাতিসংঘের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) এবং ইউনেসকোর ‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড’ এর তথ্য অনুয়ায়ী সেই বছর (২০১৫ সাল) বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বা দেড় কোটি জনগণ ইন্টারনেট পরিসেবার আওতায় ছিল। ২০১৮ সালের মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংস্থা জিএসএমএ জানায়, বাংলাদেশে প্রকৃত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ। যদিও সরকারের হিসেব ছিল ৮ কোটি ৮ লাখ। মানে মোটা দাগে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেট কি তা ২০১৮ সালেই জানতেন না।

তার অর্থ যদি হিসেব করি, ২০১৩ সালে ফেসবুক, টুইটার সহ সবকিছুই আজকের দিনের চেয়ে নাজুক ছিল। আসুন দেখি, আজকের দিনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কত? ২০২০ সালের ২ নভেম্বর প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১১ কোটির বেশি। অন্য একটি সূত্র জানায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ। ২০১৫ সালে যা মেরেকেটে ১০ শতাংশও ছিল না। তার মানে কেবল ৬ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছেন। মাহমুদুর রহমান সাহেবের জন্য প্রতিবাদ না হবার এটাও কি বড় কারণ নয়?

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির খন্ডচিত্র

আসুন এবার সংবাদপত্রের হিসেব করি। একটু কষ্ট করে গুগল করলেই দেখতে পাবেন ২০১৩ সালের বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিজেদের প্রচারণা আর অনলাইনে খবর পড়ার গুরত্ব তুলে ধরতেই ব্যস্ত। আসলেই কত সংখ্যক পোর্টাল ছিল? তা জানা প্রায় অসম্ভব। তবে সংখ্যাটি যে ১০০ এর নিচে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তথ্য হালনাগাদ সে সময়ে অতখানিই কঠিন ছিল। আর বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজারের বেশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল কাজ করে চলেছে। মাহমুদুর রহমান সাহেবের জন্য সে সময়টা আসলেই কঠিন ছিল।

এবার আসা যাক বর্তমানের সাংবাদিকতা নিয়ে। দেশের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেন, সাংবাদিক মানেই দালাল, পা চাটা, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সত্য কথা হলো, পেশাদারিত্ব অনেক বড় এক জিনিস। যেটার কাছে সাংবাদিকরা প্রায়ই বলি হন। সাংবাদিকের কাজ সর্বক্ষেত্রে মতামত দেয়া নয়, তথ্য প্রকাশ করা। কিছুক্ষেত্রে তাতে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়। যেমনটা রোজিনা ইসলাম দিয়েছে। তবে সবসময়ই ঘটনার মূলে যাওয়া সম্ভব না। এটিও বিবেচনায় রাখা দরকার। মাওলানা মামুনুল হকের মত একজন ব্যক্তিত্বের পূর্বের জীবন কেমন ছিল সেটা অতীতে গিয়ে দেখা সম্ভব নয়। কেবল বিশ্বাসের ব্যাপার। আমার সেই বিশ্বাস দিয়ে সংবাদ পরিবেশন চলে না। মতামত দেয়া চলে, কলাম দেয়া যায়। মতামত দেয়া সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। এই লেখাটি সম্পূর্ণভাবে মতামত অংশের একটি লেখা। এখানে একজন গণমাধ্যমকর্মী নিজস্ব চিন্তাধারার সম্পূর্ণটাই প্রকাশ করতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবেই বরং প্রকাশ করা যাক।

দেশের সাম্প্রতিক বড় একটি ঘটনা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা। একজন সাংবাদিক যে মতেরই হোক না কেন, সংবাদ পরিবেশনের সময় তাকে ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করা দরকার, যেমনটা ঘটছে। যেকোন আলেম নারীঘটিত অপরাধে জড়িত এটা বিশ্বাস না করলেও একজন সাংবাদিক সংবাদ পরিবেশনের বেলায় মামলায় যেমন উল্লেখ আছে তেমন কথাই লিখবেন। কিন্তু যখন কোন মতামত প্রকাশ করা হবে, তখন তিনি যুক্তি দ্বারা নিজের যা বিশ্বাস সেটাই প্রকাশ করবেন,

যাচাই করে সংবাদ পড়ুন

এক্ষেত্রে দেশের কিছু মিডিয়ার কথা উঠে আসে। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনের নামে নিজস্ব চিন্তাধারা এবং একটি মহলের বিষেদগার করতেই ব্যস্ত। কিন্তু তাদের সংখ্যা কত? বাংলাদেশের ২৫/২৬ টি টিভি চ্যানেলের মাঝে হাতে গোণা ৫/৬ চ্যানেলের এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ বা মতাদর্শ পরিদর্শনের মত কাজে লিপ্ত হতে দেখা যায়। আর যুগ যেহেতু ট্রেন্ড কিংবা স্রোতে গা ভাসিয়ে চলার পক্ষে। তাই সেসবই আমাদের ফেইসবুক নিউজফিডে জায়গা করে নেয় বেশি। হয় ভাইরাল! কিন্তু সচেতন নাগরিক সমাজ কি পারতো না সচেতন ভাবেই এমন সংবাদমাধ্যম পরিহার করতে?

এই লেখার উদ্দেশ্য কোনভাবেই সর্বক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সমর্থন করা নয়। অবশ্যই যারা সাংবাদিকতার নামে কেবল এক বৃত্তে আটকে থেকে বিষেদগার করে চলেছে তারা বর্জনীয়। তারা নিন্দার পাত্র। তবে কিছুক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যে পরিমাণ অপদস্থ করা হয় সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে, সাংবাদিক সমাজের সেটা প্রাপ্য না। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

জুবায়ের আহাম্মেদ
ফেস দ্যা পিপল