বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা জন্য পাঠানোর দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এতো অসুস্থ যে, এখন ডাক্তারা বলছেন, আমাদের বিদ্যা এবং জ্ঞান প্রায় শেষ। আমরা আর এখানে এর বেশি কিছু করতে পারবো না। এটা পরিস্কার করে বলেছেন তারা। তারা বলছেন, অবিলম্বে চিকিৎসা জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো দরকার। হাসিনা শুনতে চান না।
‘তার মন্ত্রীরাও বলেন উচিত। আওয়ামী লীগের এমপিরা বলেন, এটা মানবিক কারণে দেয়া উচিত। সারাদেশের মানুষ, ডাক্তার, উকিল, বুদ্ধিজীবীরা এবং অধ্যাপকেরাও বলছেন। কিন্তু তিনি এটা শুনতে চান না। কেনো চান না, তার প্রতিহিংসা। তার প্রতিশোধ। বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু রাজনীতি থেকে নয় জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করতে এই চক্রান্ত করছেন তিনি (প্রধানমন্ত্রী)। আমরা জানি, আন্তর্জাতিকভাবেও তার ওপর চাপ আসছে। কিন্তু কোনটাই তিনি শুনছেন না।’
যুবদলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় তার। এই প্রমাণ দিতে হবে। এখন যারা যৌবক আছে, যারা যুব দলের সঙ্গে আছে- এই ভয়াবহ দানবকে ধ্বংস করতে হবে। এই যুদ্ধে অত্যন্ত সাহসী এবং কৌশলীভাবে যেতে হবে। আমরা চাই, আজকেই এই সরকারকে ঘাড় ধরে ফেলে দেই। সবাই চায়, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষই চায়। কিন্তু যদি আমরা ভুল করি তাহলে আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। সুতরাং প্রত্যেকটি পদক্ষেপ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে নিয়ে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা অবশ্যই জয়ী হব।
বেগম খালেদা জিয়া তার জীবন নিয়ে লড়াই করছেন জানিয়ে নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আমরা কি ঘরে বসে থাকবো? আমরা ঘরে বসে থাকবো না। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে তার জীবন রক্ষার জন্য অবশ্যই কাজ করবো।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থির জন্য লাখ লাখ পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পুলিশদের দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। আর তাদেরকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চরমভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়ে এখন আওয়ামী লীগের যারা কমিশনার এবং নেতা কর্মীরা আছেন- তারা পরস্পরকে গুলি করে হত্যা করছেন। কুমিল্লা কমিশনারকে ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলেছে।
‘এটা একটা অশনি সংকেত। কিন্তু একটা জায়গায় তারা ব্যর্থ হয়নি, বিরোধী দল এবং গণতন্ত্রের যে আন্দোলন- তাকে দমন করতে তারা কিন্তু সিদ্ধহস্ত। এটাকে আমাদেরকে কাটিয়ে উঠতে হবে। পার করতে হবে, উত্তোলন করতে হবে। এই যে (পুলিশ) পারদর্শিতা তাকে পরাজিত করতে হবে।’
খালেদা জিয়ার বয়স প্রায় ৭৫ এর ওপরে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে সরে দেয়ার জন্য ১/১১ তে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিলো, সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবে তাকে সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছিলো। আমাদের পুরান ঢাকাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে একটা পরিত্যাক্ত ভবনে তাকে প্রায় দুই বছর আটক করে রাখা হয়েছিলো।
‘পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই পিজি হাসপাতালে তাকে কোন চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার ভিতরে যে রোগের সূত্রপাত হয়েছিলো, একটা কথা এখানে সালাম সাহেব বলেছেন- আজকে অনেকের মধ্যে এই প্রশ্নটা এসেছে। সেই দিন বেগম খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জন দেয়া ব্যবস্থা করা হয়েছিলো? আমরা এটা পরিস্কার করে জানতে চাই। এদের (সরকার) পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। এসময় এদেশকে সরকার বিক্রি করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও অত্যন্ত সাহসিকতা এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।