ডেস্ক::ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিঘœ ঘটেছে কোটি কোটি মানুষের চলাচলে। করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টের জন্য বাতিল করা হয়েছে হাজার হাজার ফ্লাইট। কঠোর করা হয়েছে নিরাপত্তা। ফলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এরই মধ্যে ইতালি, স্পেন এবং গ্রিসে মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্পেনের উত্তরাঞ্চলে ক্যাটালোনিয়ায় রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কঠোর লকডাউন দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন হাল্কা সংক্রমণ সৃষ্টি করে- প্রাথমিক এই তথ্য পাওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন এই নিয়ে যে, আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
বৃহস্পতিবার রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন বৃটেন, ফ্রান্স এবং ইতালিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি গত সপ্তাহের শুরুতে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, বড়দিন উপলক্ষ্যে মানুষের চলাচল বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার বৃদ্ধি পাবে। যারা পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন তারাও এতে আক্রান্ত হবেন।
ফ্লাইট অ্যাওয়ার ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলো বলেছে, বড়দিন উপলক্ষ্যে তারা স্টাফ সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে ফ্লাইট ক্রুদের করোনা পজেটিভ অথবা জোরপূর্বক আইসোলেশনে পাঠানোর কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স বলেছে, ওমিক্রন সংক্রমণ বৃদ্ধি সরাসরি তাদের ফ্লাইট ক্রুদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যারা অপারেশনে যুক্ত তারাও একই অবস্থায়।
ওদিকে আফ্রিকার যে আটটি দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র তা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে আগামী ৩১শে ডিসেম্বর। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউজের সূত্র। আগামী ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, ইশ্বাতিনি, মোজাম্বিক এবং মালাবির বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
শুক্রবার সিডনি এবং মেলবোর্ন থেকে অন্যান্য শহরে কমপক্ষে ১০০ আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করা হয়। সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে জেটস্টার। বৃটেনে বড়দিন এবং নতুন বর্ষ বরণের সময়ে রেল ভ্রমণ বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণকে বুস্টার ডোজ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
ওদিকে ফ্লাইট বাতিল নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস। তিনি বলেছেন, একটি ইভেন্ট বাতিল হওয়া জীবন বাতিল হওয়ার চেয়ে উত্তম। এমন অবস্থায় বড়দিনের উৎসবের পরেই কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপিয়ান অনেক দেশ। এর মধ্যে জার্মানিতে সর্বোচ্চ ১০ জনের বেশি মানুষকে একত্রিত হতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। বন্ধ থাকবে নৈশক্লাব। ফুটবল ম্যাচ হবে দর্শকবিহীন। এসব নির্দেশ কার্যকর হবে ২৮ শে ডিসেম্বর থেকে। অন্যদিকে ২৬ শে ডিসেম্বর থেকে সব বার এবং নাইটক্লাব বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পর্র্তুগাল। আগামী ৯ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাসায় বসে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ৫৩ লাখ মানুষ। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, মোট আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ২৭ কোটি ৮০ লাখ।