ঢাকা ০৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনোনয়ন জরিপে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ১০ মাস। কিন্তু  এরইমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে কারা দলীয় প্রার্থী হবেন তা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের আমলনামা নিয়ে কাজ করছে দলটি। সরকারের বিশেষ সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এমপিদের সাংগঠনিক ও জনহিতকর কার্যক্রম। আগামী নির্বাচনে যাদের উপর আস্থা রাখা যায় তাদের তালিকা আলাদাভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকাও তৈরি করছে দলটি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৫০জন এমপি হয়তো আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। কারণ এসব এমপি দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের পাশাপাশি তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে রেখেছেন। হাইকমান্ড একাধিকবার সতর্ক করলেও তারা না সুধরে নিজেদের মতো করেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

এরমধ্যে কয়েকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। আবার কয়েকজন এমপি নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছেন। 

পারিবারিক দ্বন্ধে সামাজিক মর্যাদা খুঁইয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভিডিও, অডিওসহ কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিষয়টিও দলীয়ভাবে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দলীয় নেতারা জানান, আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের। তাই সবদিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই করতে চায়। এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের এ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেসব অনুসরণ করছি। সূত্র জানিয়েছে, দু’ভাবে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। প্রথমে এমপিদের উপর জরিপ চালানো হচ্ছে। তারপর যেসব এমপি বিতর্কিত হয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাদের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে তাদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এক আসনে কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তারপর তাদের মধ্যে যিনি আস্থাশীল ও সাধারণের কাছে প্রিয় তাকে চূড়ান্ত করা হবে। সাংগঠনিক জরিপের পাশাপাশি বিশেষ সংস্থার সহযোগিতা নিয়েও দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কাজে যুক্ত একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, কয়েকজন এমপি’র ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কিত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে উত্তরাঞ্চলের এক এমপি’র বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। দলের নেতারা জানান, গত ১২ই জানুয়ারি রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি সব এমপিকে খোলাখুলিভাবে জানিয়েছেন কারা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাবেন আর কারা পাবেন না। 

ওইদিনের বৈঠকে এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কে কী করছে তার সব তথ্য আমার কাছে আছে। যাদের বদনাম আছে, নানা অপকর্মে নাম জড়িয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে যারা দাঁড়ায় তারাই নমিনেশন পাবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই তাদের দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা মানবজমিনকে জানায়, দলীয় প্রধান আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে জানিয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কারও দায়িত্ব নিতে পারবো না। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিচ্ছি। সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। মাঠ জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। 

জনগণের দ্বারে দ্বারে না গেলে জনগণ ভোট দেবে না। সেজন্য আমিও মনোনয়ন দেবো না। এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না। সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে যাও। দলের সভাপতির এসব বক্তব্যকে আগামী নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ আওয়ামী লীগের ৩ শতাধিক সংসদ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আছেন যারা বয়স্ক। সঙ্গত কারণেই আগামী নির্বাচনে তাদের বাদ যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন আমাদের নেত্রী। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে তো আর প্রার্থী করবেন না। যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং যে বিষয়ে অভিযোগ সেসব কিছুর উপর একটি সার্ভে চলছে। বার বার মাঠ জরিপ করে আমলনামা নেয়া হচ্ছে। সেই আমলনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

মনোনয়ন জরিপে আওয়ামী লীগ

আপডেট টাইম ০২:৩১:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো ১০ মাস। কিন্তু  এরইমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে কারা দলীয় প্রার্থী হবেন তা চূড়ান্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। আপাতত একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের আমলনামা নিয়ে কাজ করছে দলটি। সরকারের বিশেষ সংস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এমপিদের সাংগঠনিক ও জনহিতকর কার্যক্রম। আগামী নির্বাচনে যাদের উপর আস্থা রাখা যায় তাদের তালিকা আলাদাভাবে তৈরি করা হচ্ছে। যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকাও তৈরি করছে দলটি। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৫০জন এমপি হয়তো আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। কারণ এসব এমপি দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের পাশাপাশি তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করে রেখেছেন। হাইকমান্ড একাধিকবার সতর্ক করলেও তারা না সুধরে নিজেদের মতো করেই দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

এরমধ্যে কয়েকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। আবার কয়েকজন এমপি নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়েছেন। 

পারিবারিক দ্বন্ধে সামাজিক মর্যাদা খুঁইয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভিডিও, অডিওসহ কথোপকথনের রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের বিষয়টিও দলীয়ভাবে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দলীয় নেতারা জানান, আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের। তাই সবদিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই করতে চায়। এজন্য আমরা অনেক সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের এ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা সেসব অনুসরণ করছি। সূত্র জানিয়েছে, দু’ভাবে তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। প্রথমে এমপিদের উপর জরিপ চালানো হচ্ছে। তারপর যেসব এমপি বিতর্কিত হয়েছেন তাদের নির্বাচনী এলাকায় কাদের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে তাদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে এক আসনে কয়েকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তারপর তাদের মধ্যে যিনি আস্থাশীল ও সাধারণের কাছে প্রিয় তাকে চূড়ান্ত করা হবে। সাংগঠনিক জরিপের পাশাপাশি বিশেষ সংস্থার সহযোগিতা নিয়েও দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কাজে যুক্ত একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, কয়েকজন এমপি’র ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কিত বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে উত্তরাঞ্চলের এক এমপি’র বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। দলের নেতারা জানান, গত ১২ই জানুয়ারি রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি সব এমপিকে খোলাখুলিভাবে জানিয়েছেন কারা আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাবেন আর কারা পাবেন না। 

ওইদিনের বৈঠকে এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কে কী করছে তার সব তথ্য আমার কাছে আছে। যাদের বদনাম আছে, নানা অপকর্মে নাম জড়িয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক রয়েছে, জনগণের পাশে যারা দাঁড়ায় তারাই নমিনেশন পাবে। আর যারা জনবিচ্ছিন্ন, এলাকার মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই তাদের দলের মনোনয়ন দেয়া হবে না। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা মানবজমিনকে জানায়, দলীয় প্রধান আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন কঠিন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে জানিয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কারও দায়িত্ব নিতে পারবো না। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিচ্ছি। সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। মাঠ জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সবাইকে এলাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে হলে জনগণের ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। 

জনগণের দ্বারে দ্বারে না গেলে জনগণ ভোট দেবে না। সেজন্য আমিও মনোনয়ন দেবো না। এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকলে মনোনয়ন দেয়া হবে না। সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে যাও। দলের সভাপতির এসব বক্তব্যকে আগামী নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য স্পষ্ট বার্তা বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ আওয়ামী লীগের ৩ শতাধিক সংসদ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে একটা বড় অংশ আছেন যারা বয়স্ক। সঙ্গত কারণেই আগামী নির্বাচনে তাদের বাদ যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন আমাদের নেত্রী। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে তো আর প্রার্থী করবেন না। যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং যে বিষয়ে অভিযোগ সেসব কিছুর উপর একটি সার্ভে চলছে। বার বার মাঠ জরিপ করে আমলনামা নেয়া হচ্ছে। সেই আমলনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না।