জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগাঁও::
অবশেষে প্রায় দেড় যুগের প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামীলীগ প্রধান ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও সফরে আসছেন। এ খবর নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মুহা. সাদেক কুরাইশী জানান, ২৯ মার্চ বিকালে ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল বড়মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। তিনি আরো জানান, ওইদিন প্রধানমন্ত্রী জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন ।
এ উপলক্ষে শুক্রবার বিকালে দলীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ।
সভায় দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন, জেলা সাধারণ সম্পাদক মুহা. সাদেক কুরাইশী, সহ সভাপতি ইমদাদুল হক, সংরক্ষিত মহিলা এমপি সেলিনা জাহান লিটা, যুগ্ম সম্পাদক এড তোজাম্মেল হক মঞ্জু , সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মশারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাদেক কুরাইশী বলেন, জনসভা সফল করার লক্ষ্যে জেলার পাঁচ উপজেলাসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে ২০০১ সালে ঠাকুরগাঁও সফর করেছিলেন শেখ হাসিনা। ১৭ বছর ৩ মাস পর তিনি আবার ঠাকুরগাঁও এর মাটিতে পা রাখছেন।
সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, “ বিগত বছরগুলোতে এ জেলায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চিরকালের এই অবহেলিত জনপদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অপূর্ণ দাবী দাওয়াগুলো পূরণের সূবর্ণ সুযোগ এসেছে। তাঁর সফরকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিকে বিপুল আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন জনসাধারণ। ঠাকুরগাঁওয়ে মানুষের দাবিগুলো তুলে ধরা হবে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী মানুষের দাবিগুলো পূরণ করবেন।”
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের নিঃছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থলসহ পুরো ঠাকুরগাঁও শহরজুড়েই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। রেঞ্জ পুলিশ থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে আসা হবে। আইনশঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
বৃটিশ আমলের মহকুমা ও ৭৪ এ বাকশাল আমলের মহকুমা হলেও এ জেলায় নেই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় , মেডিকেল,ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা কৃষি কলেজ। বৃটিশ আমলের বিমানবন্দরটি প্রায় ২ হাজার একর জায়গাসহ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।বারবার প্রতিশ্রুতি স্বত্বেও এ বিমানবন্দর টি চালুর যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থাটি মান্ধাতা আমলের মূলত সড়ক নির্ভর তাও যথেষ্ট অবহেলিত অচল গাড়িগুলো এই রুটে চালানো হয় , নেই ইন্টারসিটিসহ আধুনিক ট্রেন যোগাযোগব্যবস্থা। এগুলো নিয়ে এ জেলায় অসন্তোষ চরমে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারসিটি ট্রেন চলাচলসহ নানা আঞ্চলিক দাবীতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন ও অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে এ জেলায়।
এগুলোসহ ভারী শিল্পকারখানা, ইপিজেড স্থাপন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আশা করছেন স্থাণীয়রা।
আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি প্রয়াত জননেতা একরামুল এমপির কন্যা জনপ্রিয় রাজনীতিজ্ঞ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা জাহান লিটা এম পি বলেন, এ জেলা আওয়ামীলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি শক্ত ঘাঁটি। ৭৫ পরবর্তিতে দলের চরম দুঃসময়েও এ জেলার তিনটি আসনেই জনসাধারণ অধিকাংশ সময় আওয়ামীলীগ ও মহাজোট বা জোটকে বিজয়ী করে এসেছে।প্রধানমন্ত্রী এসে এটাই প্রমাণ করবেন যে আওয়ামী লীগও এ অঞ্চলের জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি ঘটাতে তাদের সাথে আছে।
প্রবীণ শিক্ষাবীদ অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও শিক্ষা-সাংস্কৃতিক দিক থেকে ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। তারপরও এ এলাকার জনগণের চাওয়াগুলো উপেক্ষিত দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে ঠাকুরগাঁওবাসীর আশাগুলো এবার পূরণ হবে।
ঘাষমূল স্তরসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। চলছে সাজ সাজ রব ও উৎসবের আদলে ব্যপক প্রস্তুতি। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঠাকুরগাঁও শহর।.,;