অনলাইন ডেস্ক:: হঠাৎ সুষ্ঠু ভোট নিয়ে এত মাতামাতি কেন-এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আসল কথা হলো নির্বাচন বানচাল করা। একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই তাদের মাথাব্যথার কারণ। না হলে সুষ্ঠু ভোট, সুষ্ঠু ভোট বলে এত মাতামাতি কেন? তারা ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছে। তাহলে এটাই বলতে হয়, সন্দেহ হয় রে! মানুষ যদি সেটা বোঝে।
অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট আমাকে শেখাতে হবে না। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সবাই ভোটচোর। এ দেশের মানুষ জানে নৌকায় ভোট দিয়েই তারা স্বাধীনতা পেয়েছে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সফর বিষয়ে জানাতে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারা সব জায়গায় গিয়ে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতায় থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, অবাধে সে টাকা খরচ করে যাচ্ছে তারা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি স্পষ্ট বলে এসেছি। কেন? ভোটের জন্য তো আমরা সংগ্রাম করলাম। রক্ত দিয়ে, আমার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার অর্জন করে দিয়েছি। আজকে আমাকে ভোটের অধিকার শেখাতে হবে না।
তিনি বলেন, আমরা তো সেই আইয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করি, রাস্তায় থাকি। এমন নয় যে, নতুন এসেছি। স্কুলজীবন থেকেই রাস্তায় আন্দোলন সংগ্রাম করছি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে করেছি, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে করেছি। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া সবাই তো ভোটচোর। আওয়ামী লীগ আসার পর আওয়ামী লীগের তো ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগকে তো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়। কাজের মধ্য দিয়ে আস্থা অর্জন করি আমরা। বিএনপির জন্মই অবৈধ, এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের শিকড় নেই। এ দলের নেতারা যা বলে, তার সবই মিথ্যা। তাদের মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না।
জি-২০ সম্মেলন থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন’—বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপির এ অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই, বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে, সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা—এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি; কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এ রকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্য বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, জনতে চাইলে এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। আমার মনে পড়ে না, এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেসও করেনি। ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা, এরপর এটা কেউ চায়? এ ব্যবস্থা বিএনপিই ধ্বংস করেছে।
বিএনপির আন্দোলনের টাকা কোথা থেকে আসে, সেই উৎস খুঁজে বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিএনপি বলে তারা নাকি কথা বলতে পারছে না; কিন্তু তারা তো সভা সমাবেশ করেই যাচ্ছে। আমি কোনো বাধা দিচ্ছি না। কারণ, তাদের আন্দোলনের কারণে মানুষ তো কিছু টাকা পাচ্ছে। আন্দোলনের উছিলায় তাদের পকেটের দুর্নীতির টাকা সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও পাচ্ছে। তবে তারা এত টাকা কোথায় পায়, সে উৎস আপনারা বের করুন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা তো বারবার তারিখ দিয়েই যাচ্ছে। এই তারিখে ফেলে দেবে, ওই তারিখে ফেলে দেবে। তারা আন্দোলন করুক। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি যদি করা হয়, তাহলে ছাড়ব না। বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে সংসদের বাইরের কোনো দলকে বিরোধী দল বলা হয় না। সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকলেই বিরোধী দল। তাদের (বিএনপি) তো সংসদে একটি সিটও নেই। রাস্তায় যারা ঘেউ ঘেউ করে তারা বিরোধী দল নয়।