স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:: আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে দেশব্যাপি উদযাপিত হলো মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ধনী-গরীব, ছোট-বড় সবাই বিভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে ও আনন্দ বিনিময়ের মাধ্যমে পার করেছেন দিনটি। শনিবার আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আদায় করা ঈদ জামাতে মুসল্লিরা দেশ ও বিশ্বের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। দেশের প্রতিটি এলাকাতেই ঈদগাহ, মসজিদ কিংবা খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হ়য়েছে ঈদ জামাত। দু বছর আগের ঈদুল ফিতরের সময় দেশে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং ভয়াবহ হামলা চালায়। গত বছরের ঈদেও যার আতং কিছুটা ছিলো। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ততপরতায় বেশি ক্ষতি করতে পারেনি জঙ্গিরা। এ বছর প্রথম থেকেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রুনির্দিষ্ট কোন হুমকি না থাকার কথা বলেছিল। জনমনেও তেমন কোন আতংকই ছিলো না। ফলে বেশ আনন্দ-উচ্ছাসের সঙ্গেই এবার দেশব্যাপি উদযাপিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার পর দেশের মুসলিম সম্প্রদায় তাদের বৃহত্তম এই ধর্মীয় উৎসবটি পালন করেছে। ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে আটটায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণস্থ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। দ্বিতীয় বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল সাতটায়। এছাড়া সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আরো ৪টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঈদগাহে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পেরেশনের মেয়র, উর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারী ও সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকরা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। ঈদের নামাজ আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুসল্লীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতরের জামাত। সেখানে জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এমপি, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মো. নাসিম এমপি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির সেক্রেটারি নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, হুইপবৃন্দ, জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সংসদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদার, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার জনগণ ঈদের জামাতে শরীক হন। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও জাতীয় অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি মুসল্লীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত ৫টি ঈদ জামাতের প্রথমটিতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয় জামায়াতে বায়তুল মুকাররম মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম, তৃতীয় জামায়াতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মুফতি মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান, চতুর্থ জামায়াতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মাওলানা জুবাইর আহাম্মদ আল আযহারী এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামায়াতে তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ ইমামতি করেন। এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মহানগরীর মোট ৪০৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জানায়, ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৪টি করে এবং জাতীয় ঈদগাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠসহ মোট ২৩০টি স্থানে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জানায়, এই সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডের মোট ১৭৯টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৯টায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে ও শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ‘সি’ ব্লকের মসজিদ বায়তুল ফালাহ কমপ্লেক্সে ঈদুল ফিতরের দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি সকাল সাড়ে সাতটায় ও দ্বিতীয়টি সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। দুই বছর আগে ঈদুল ফিতরে এ জামাতকে লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা হওয়ার পরও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। তাই এবার ঈদ জামাতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার ১৯১তম ঈদুল ফিতরের জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ধর্মীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে আজ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথকভাবে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধি এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদ উপলক্ষে আজ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বনানী-ঢাকা গেট হতে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ‘ঈদ মোবারক’।
বিভাগীয় শহরগুলোতে, যেমন- চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও বরিশালে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। এ ছাড়া জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নসহ সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যথাযথ মর্যাদায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। ঈদে ঢাকা মহানগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহানগরীতে র্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুক্রবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। আগামীকাল রোববার এ ছুটি শেষ হবে।