আজম রেহমান::প্রায় আড়াই বছর যাবৎ প্যারালাইজড স্বামীর প্রানান্ত সেবা শুশ্রুশা, দেখভাল করাসহ মৃত্যু অবধি হাসপাতালে স্বামীর সাথে থাকা বিধবা অসহায় আম্বিয়া স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা না পাওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। স্বামীর ১ম পক্ষের ছেলে ভুয়া তালাকনামা তৈরী করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গায়েব করে এই ভাতা বন্ধ করে নিজে আত্নসাতের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, পীরগঞ্জ উপজেলার জগথা মৌজার মৃত জামাল গাজীর পুত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে গত ২৫.৯.১৬ইং ১ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধায্যে রেজিষ্ট্রি কাবিন মূলে একই মৌজার আম্বিয়া খাতুনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহে বীরমুক্তিযোদ্ধা খয়রাত আলী সহ ভাকুড়া গ্রামের আনিছুর রহমান ও জগথা গ্রামের আবু হোসেন স্বাক্ষী হিসেবে সহি স্বাক্ষর করে। বিবাহের পর থেকে স্বামীর ঘর সংসার করাকালে আকষ্মিকভাবে স্বামী প্যরালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। অচল স্বামীকে হুইল চেয়ারে করে চলাফেরায় সার্বক্ষনিক সহযোগীতা সহ তার সেবা করেন আম্বিয়া। এক পর্যায়ে গত ২৪.১২.১৭ ইং গুরুতর অসুস্থ হয়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনকে। সেখানেই ২৮ ডিসেম্বর/১৭ ইং স্ত্রী আম্বিয়ার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আনোয়ার হোসেন। মৃত্যুর পর পরই মৃত’র আগের পক্ষের পুত্র আবুল হোসেন পিতা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে ছোট মা আম্বিয়াকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে নানামুখি ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আবুল তার ৭৭ বছর বয়সী বিধবা শাশুড়ী ফরিদা কে দিয়ে তার পিতার সাথে ব্যাকডেটে ভুয়া নিকাহনামা তৈরী করেন। নিকাহনামায় বিবাহ রেজিষ্ট্রির তারিখ দেখানো হয় ১০.৪.১৬ইং এবং বিবাহে কনের উকিল হিসেবে রমজান আলী মুন্সি, স্বাক্ষী হিসেবে আবুলের স্ত্রী হামিদা এবং বরের উকিল নিয়োগের স্বাক্ষী হিসেবে বরের পুত্র আবুল হোসেন, সাধারন স্বাক্ষী হিসেবে পুত্র আবুলের শ্যালিকা হালিমা ও ভায়রা ভাই সোহেল সহি স্বাক্ষর করেন। একইভাবে আনোয়ারের বৈধ স্ত্রী আম্বিয়াকে ১১.১.১৭ ইং একতরফা তালাক দেখিয়ে ১১.৩.১৭ ইং তালাক রেজিষ্ট্রি দেখানো হয়। তালাকের নকলের ৫ নং কলামে তালাকে বি অর্থাৎ একতরফা তালাক উল্লেখ করা হলেও ৬ নং কলামে খোলা তালাক উল্লেখ করা হয়েছে। তালাকের নকলে ভিন্ন রকমের তালাকের উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তালাকটি ভুয়া। এই তালাকের তথ্যেও মারাত্নক রকমের অসঙ্গতি বিদ্যমান। তালাকে কন্যার ঠিকানায় গ্রাম দিঘীর হাট, উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ, জেলা গাইবান্ধা উল্লেখ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আম্বিয়ার ঠিকানা জগথা, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও উল্লেখ রয়েছে। যা তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিবাহের রেজিস্ট্রি ফরমে উল্লেখ রয়েছে। তালাক রেজিস্ট্রির তারিখ ১১.৩.১৭ উল্লেখ করা হলেও এই সময়ের অনেক আগে থেকেই মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার প্যরালাইজড হয়ে শয্যাশায়ি ছিলেন এবং স্ত্রী আম্বিয়ার সেবা শুশ্রুষায় তার আশ্রয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। ২.৭.১৭ইং তারিখে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বরাবরে দাখিলকৃত এক অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার অভিযোগ করেন তার পুত্র প্রায় ২ বছর ধরে তার কোন খোজ খবর রাখেননা, তাকে যখন তখন মারতে উদ্যত হন, বটি নিয়া জবাই করতে যান ইত্যাদি। এছাড়াও অভিযোগে তিনি তার পুত্র কতৃক সমূহ ক্ষতির আশঙ্কার কথা এবং তার রাষ্ট্রীয় ভাতা উত্তোলন করে আত্নসাৎ সহ নানা অপতৎপরতার উল্লেখ করেন। একই বিষয়ে স্ত্রী আম্বিয়ার ঘরে তালা লাগানো, ঘরের মালপত্র সহ ৮৮হাজার টাকা সরিয়ে ফেলার ঘটনায়ও আম্বিয়া বাদি হয়ে পীরগঞ্জ থানায় আবুলের বিরুদ্ধে ৯.৩.১৬ইং, ১৩.৩.১৬ইং সহ বিভিন্ন তারিখে একাধিক জিডি করেন এবং পীরগঞ্জ পৌরসভায় বিচার চেয়ে ২শ’টাকা ফি জমা দিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন, যার রিসিট নং ২০৪৯৮ তাং ১৩.৩.১৭ইং। পৌর কতৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেননি। পুলিশও জিডির বিষয়গুলো আমলে না নেয়ায় অসহায় আম্বিয়া এখন ক্ষতির সম্মুখিন। ১১.১.১৭ ইং তারিখে আম্বিয়ার তালাক দেখানো হলেও ১.১.১৭ ইং অসুস্থ আনোয়ার তার টাকা পয়সা গন্যমান্য ব্যাক্তির মধ্যস্থতায় স্ত্র আম্বিয়া সহ সন্তানদের মাঝে বন্টন করে দেন। যে হলফনামায় আনোয়ার হোসেন সহ তার স্ত্রী আম্বিয়া, পুত্র আবুল কন্যা হুসনেয়ারা, পুত্রবধু হামিদা সংশ্লিষ্ট সকলে সহি স্বাক্ষর করেন। এদিকে আশ্চয্যজনক হলেও সত্য যে, ফরিদার সথে আনোয়ার হোসেনের বিবাহের কথা কলা হলেও ফরিদা কখনোই তার তথাকথিত স্বামীর সংশ্রবে আসেননি। ১০.৪.১৬ইং বিবাহ রেজিস্ট্রি দেখানো হলেও অদ্যাবধি তিনি মৃত স্বামীর ভেলাতৈর গ্রামস্থ বাড়ীতেই ৩ পুত্রের সাথে বসবাস করে আসছেন। বিবাহের কোন শর্ত পূরন করা না হলেও এই ফরিদাকে আনোয়ারের স্ত্রী দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলনের জন্য কাগজপত্র তৈরী করা হয়েছে।
এদিকে এলাকার মানুষ পাড়া প্রতিবেশীদের বক্তব্যে জানা যায়, আম্বিয়া ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারের একমাত্র স্ত্রী। যিনি স্বামীর মৃত্যুর সময় পর্যন্ত স্বামীর শয্যাপাশে ছিলেন এবং সেবা শুশ্রুষা করেছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার মারা যাবার কয়েকমাস আগে গত ১১.০৪.১৭ইং অগ্রণী ব্যাংক পীরগঞ্জ শাখা থেকে ৩ লক্ষ টাকা লোন নেন যেখানে স্ত্রী হিসেবে আম্বিয়া সই স্বাক্ষর দেন। ১২.৪.১৬ইং তারিখে ফরিদার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে স্ত্রী হিসেবে তিনিও ঐ লোন ফরমে সহি স্বাক্ষর দিতেন। মূলত সম্পূর্ন ঠান্ডা মাথায় এবং পরিকল্পিতভাবে পিতার রাষ্ট্রীয় ভাতা থেকে আম্বিয়াকে বঞ্চিত করার মানষে আবুল হোসেন বিভিন্ন জাল জালয়াতির মাধ্যমে নিজের শ্বাশুড়ীর সাথে পিতার বিবাহ ও আম্বিয়ারে সাথে তালাকের কাগজপত্র সৃস্টি করে বিভ্রান্তির নজির রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী সমাজসেবায় জয়িতা খেতাবপ্রাপ্ত নাহিদ পারভিন রিপা বিভিন্নভাবে আম্বিয়ার পাশে দ্বাড়িয়ে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন বলে জানান আম্বিয়া।
বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের প্রকৃত স্ত্রী আম্বিয়াকে স্বামীর রাষ্ট্রীয় ভাতা বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
সংবাদ শিরোনাম
অবৈধ তালাকনামা তৈরীর অভিযোগ,ভিক্ষে করে জীবন যাপন করছে মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী ঠাকুরগাঁওয়ে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত পাশে থেকেও মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর ভাতা পাচ্ছেনা আম্বিয়া
- সংবাদ সারাদিন ডেস্ক :
- আপডেট টাইম ০৩:০৪:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জানুয়ারী ২০১৯
- ১০৮ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ