ডেস্ক নিউজ :: ফার্মার্স ব্যাংক গুলশান শাখার ম্যানেজার জিয়া উদ্দিন আহমেদেরসাথে প্রথমে বিদেশি এক নাগরিকের পরিচয় হয়। পরে বন্ধুত্ব। এক পর্যায়ে বিশ্বস্ততা অর্জন! বন্ধুত্বের সূত্র ধরে জিয়ার কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন জিয়া। অবশেষে এ অভিযোগের ভিত্তিতে তিন বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, গত ৭ নভেম্বর জিয়া উদ্দিন আহমেদ নামীয় একজন ব্যাংক কর্মকর্তার লিখিতভাবে অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর উত্তরা থেকে তিন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। আটকরা ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই কোটি দেশীয় টাকার সমপরিমান ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে এ অর্থ লুট করেছে।
আটকদের মধ্যে রয়েছে কুয়েতি ফস্তো, এমেলিয়া মাওয়াবো ও হারমান মার্টিন। এদের মধ্যে দু’জন ক্যামেরুনের নাগরিক, অন্যজন আফ্রিকান হলেও সে কোন দেশের তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি জানান, গত সাত অক্টোবর রোজার্স নামের এক জার্মানি নাগরিক জিয়াকে ফোন দিয়ে বিনিয়োগের করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তারা কৃষি, ওষুধ, গার্মেন্টস এবং রিয়েল এস্টেট খাতে টাকা বিনিয়োগ করবে এবং জিয়া উদ্দিন আহমেদের কর্মরত ব্যাংকে প্রায় তিন শত কোটি টাকা ডিপোজিট করবে মর্মে তাকে আশ্বস্ত করে।
এ লক্ষ্যে তার গুস্তাভো নামের একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন । পরে জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। এক পর্যায়ে উভয়েই বেশ ঘনিষ্ট হয়ে উঠেন। সুসম্পর্কের সুবাদে গুস্তাভো বিভিন্ন সময়ে দেশীয় টাকা এবং ৪ হাজার ডলার প্রদান করে। এতে তাদের মধ্যে একটি লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে গুস্তাভো জিয়াকে ডলারের বিপরীতে ইউরো পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে প্রলুব্ধ করে।
ডলারের পরিবর্তে ইউরো পরিবর্তন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর গুস্তাভো জিয়া উদ্দিন আহমেদকে ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো নিয়ে গুলশানস্থ একটি ফার্নিচার শো-রুমের সামনে আসতে বলেন। এরপর জিয়া গুস্তাভো ও তার সঙ্গিদের সাথে সাক্ষাত করেন। এক পর্যায়ে গুলশানের ওই ফার্নিচারের শো-রুমের সামনে লেনদেন না করে জিয়া উদ্দিনের বাসায় লেনদেন করা হবে বলে স্থির করা হয়। এ উদ্দেশ্যে তারা জিয়া উদ্দিন আহমেদের মাইক্রোবাস যোগে জিয়া উদ্দিনের সাথে তার বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে তারা জিয়া উদ্দিন আহমেদের বাসায় পৌঁছায়।
বাসায় প্রবেশের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আটক কুয়েতি ফস্তো থাকা একটি বোতল নিচে ফেলে দেয় এবং তা থেকে ঝাঁঝাঁলো তরল পদার্থ জিয়া উদ্দিন আহমেদ চোখে-মুখে ও গায়ে এসে পরে। তখন ওই ঝাঁঝঁলো তরল পদার্থ পরিষ্কার করার জন্য জিয়া উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে তারা বাথরুমে প্রবেশ করে। পরে সু-কৌশলে তারা জিয়ার কাছে থাকা ইউরোগুলো সমপরিমাপের সাদা কাগজ দ্বারা প্রতিস্থাপন করে ফেলে। অর্থাৎ জিয়া উদ্দিন আহমেদের ইউরোগুলো তার হস্তগত করে ফেলে। এক পর্যায়ে বর্ণিত ডলার-ইউরো পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতারকরা অজুহাত দাড় করিয়ে লেনদেনের বিষয়টি স্থগিত করে ফেলে।
ফলে ওই দিনে বর্ণিত লেনদেনটি সংঘঠিত হয় নি। পরে একই গাড়ীতে করে জিয়া উদ্দিন আহমেদ তাদেরকে গুলশানস্থ একটি কফি সপের সামনে নামিয়ে দেন। ঘটে যাওয়া প্রতারণার বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে জিয়া উদ্দিন আহমেদ কিছুই বুঝতে পারেননি। পরবর্তীতে জিয়া উদ্দিন আহমেদ তাদের সাথে মুদ্রা বিনিময়ের জন্য যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এক পর্যায়ে যোগাযোগ হলে তারা জানায় যে, পুলিশ তাদেরকে খুঁজছে। তখন জিয়া উদ্দিন আহমেদের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হলে, তিনি তার কাছে থাকা ইউরোগুলো পরীক্ষা করে দেখেন যে, তার ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরোগুলোর পরিবর্তে সমান মাপের সমপরিমান সাদা কাগজের বান্ডিল রয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে জিয়া র্যাবের দ্বারস্ত হন। এরপর র্যাব অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের তিন নাগরিককে আটক করে।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, আটকরা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করত। তাদের কাছ থেকে ১১ টি মোবাইল ফোন, দুটি পাসপোর্ট, একটি ভূয়া আমেরিকান আইডি কার্ড, পাঁচশত মূল্যমানের ১২৪ টি ইউরো নোট সমপরিমাণ ৬২ লাখ টাকা, বাংলাদেশী ২১ হাজার ১শ’ টাকা, ২শ’ পিস ইয়াবা এবং তিন বোতল বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে।