ঢাকা ০৭:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে ১০ ব্যবসায়ীর কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা যুবক

 কক্সবাজার ::

কক্সবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এক প্রতারক চক্র। মাত্র দেড় থেকে দুই মাস সময়ের মধ্যে শহরের টেকপাড়া, কালুরদোকান, বাহারছড়া, পাহাড়তলীসহ আরও বেশকিছু আবাসিক এলাকার ছোট-বড় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নানা ধরণের প্রলোভনে দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এখনও নিত্যনতুন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। চক্রটির ফাঁদে পা দিয়ে এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ হয়েছেন একেবারেই নিঃস্ব।

ব্রুনাইয়ের ভিসা সহ কাজ পাইয়ে দেওয়া, অবিশ্বাস্য কম মূল্যে পন্য সংগ্রহ করে দেওয়া, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্ধশত বিদেশ গমনেচ্ছু এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরও কয়েক কোটি টাকা। শুধু তাই নয়- পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণার করেছে সহজ সরল চাকুরী প্রত্যাশীদের সাথে।

২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর শহরের পাহাড়তলীর হাজী ফরিদ আহমদের মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন দম্পতি পরিচয়ে রাকিবুল ইসলাম রাফি নামে এক যুবক ও তার নারী সঙ্গী সাদিয়া। নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন কখনও গোয়েন্দা আবার কখনওবা পিবিআই পুলিশের কর্মকর্তা’। এ ধরণের ভারী পরিচয় দিয়ে গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে আস্থা অর্জন করে নেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিছু ব্যবাসায়ী, নব্য ধনী ও ধনবান হতে চাওয়া স্বপ্নবিলাসী কিছু লোকজনের।

এভাবে করে এবছরের ২৩ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের কমপক্ষে ১০ স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও মালিক এবং বিদেশ গমনেচ্ছু নাগরিকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে প্রতারক চক্রের এই দুই সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে সর্বোচ্ছ এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তারা এই টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

এঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত ব্যবসায়ীদের পক্ষে শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তি যেনাে গ্রেফতার এড়িয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ ও আইনপ্রয়ােগকারী সংস্থার কাছে অনুরােধ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাদীপক্ষ।

অন্যদিকে মামলা দায়েরের প্রায় দেড় মাস অতিক্রম হয়ে গেলেও অভিযুক্ত আসামী কিংবা তার সহযোগী কাউকেই আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। এনিয়েও হতাশার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশের আচরণ ও ভুমিকা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন; ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

এ বিষয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার এস আই আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন- এখনও তদন্ত চলছে। গণমাধ্যমকে জানানোর মতো তেমন কোনো তথ্য নেই। তদন্ত শেষে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলে জানানো হবে।

বিভিন্ন নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতারক যুবকের নাম রাকিবুল ইসলাম রাফি। সে চট্টগ্রাম চন্দনাইশের জোয়ারা মােহাম্মদপুর গ্রামের ডাক্তার নুরুল ইসলাম চৌধুরী বাড়ীর সামসুল ইসলাম ও জয়নাব বেগম দম্পতির পুত্র বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব চুক্তির নথি যাচাই করতে গিয়ে যুবকের জাতীয় পরিচয় পত্র সহ সমস্ত কিছু ভুয়ো বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ এই জাল পরিচয়পত্র ও নাম দিয়েই তাকে শহরের সমিতি পাড়ায় অটোরিক্সার গ্যারেজ চালাতে বিদ্যুত সংযোগ সহ মিটার প্রদান করেছে বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ কক্সবাজার।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- পাহাড়তলীর কচ্ছপিয়া পুকুর এলাকার করিম উল্লাহ নামে এক মুদি দোকানির হাত ধরে প্রতারক রাফি এই এলাকায় আসন গেড়ে বসেছিলেন। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন সবকিছু। এই এলাকার বিকাশ এজেন্ট সমির এন্টারপ্রাইজ থেকে ভিন্ন ভিন্ন শতাধিক নাম্বারে টাকা পাঠাতেন। যার একটি তালিকা প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এই এজেন্ট থেকেই পরিশোধ করতেন বিদ্যুত বিলও।

জানা যায়- কথিত রাফি নামে সুদর্শন এই যুবক দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা শহরের ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সহ প্রতিষ্ঠিত সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। এক্ষেত্রে সে কখনও পিবিআই পুলিশের কর্মকর্তা আবার কখনওবা গোয়েন্দা শাখার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছে।

আবার এমনও দেখা গেছে জেলার কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর কাছে সে নিজেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কোনো এক সামরিক কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে সুসম্পর্ক ও বিশ্বাস গড়ে তুলে। সে সুবাদে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে গেলো বছর জেলা পুলিশের গণবদলির ঘটনাতেও তাকে বদলি হতে হয়নি বলে ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে গালগল্প ছুড়েন বলে জানিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকেই মূলত লোকজন তার সাথে নানাবিধ আর্থিক লেনদেন করে বলে জানা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান- প্রতারক রাফি সবার কাছে একটি ভারী ব্যাক্তিত্ব প্রদর্শন করে আস্থা অর্জন করে। এছাড়াও শুরুর দিকে সততা বজায় রেখে চলে। এবং ব্যবসায়ীক লেনদেনেও স্বচ্ছতা দেখায়। এর ভিত্তিতেই তার সাথে প্রত্যেকেই (ভুক্তভোগী) পৃথক পৃথক ভাবে মােটা অংকের লেনদেন করে।

যা ভুক্তভােগীরা থানায় অভিযােগ করতে গেলে পরস্পরের সাথে নাটকীয়ভাবে দেখা হয়ে গেলে জানতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত সবার টাকা যোগ করে সর্বমােট ৯৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগকারীদের মধ্যে ঝিলংজার পশ্চিম লারপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আমিনের কাছ থেকে আত্মসাৎ করেছে সর্বোচ্ছ সাড়ে ২৫লক্ষ টাকা। তাকে সয়াবিন তেল ও চাউল সরবরাহ করবে বলে এই টাকা নিয়ে যায়। একই প্রলোভন দেখিয়েতোতকখালীর ডেহেরিয়া ঘোনার রাসেলের নিকট থেকে ১৪ লক্ষ ৬৫ হাজার, পাহাড়তলীর সুমন বড়ুয়ার কাছ থেকে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার, অটোরিক্সার লাইসেন্স বন্ধক রাখার কথা বলে একই এলাকার জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার, আব্দুর রহমান মুন্নার কাছ থেকে ১০ লক্ষ, ভিসা দেওয়ার কথা বলে পদুয়ার ফাহিমের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার, ৫০টি অটোরিক্সার ব্যাটারি সরবরাহ করার কথা বলে ছালামত উল্লাহ খানের কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা, অটোরিক্সা বিক্রির কথা বলে মো. করিমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা, অংশীদারী ব্যবসার কথা বলে পটিয়ার হোসাইন মোহম্মদের কাছ থেকে ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, পাহাড়তলীর মুদি দোকানী কাউসারকে কম মূল্যে চাল, সয়াবিন সহ আরও অন্যান্য পণ্য দেওয়ার কথা বলে ৮০ হাজার টাকা, যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির মালিক হাজী ফরিদ আহমদ ও তার পরিবারের অপরাপর সদস্যদের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার ও বকেয়া বাসা ভাড়া সহ মোট ১০ লাখ টাকা এবং অটোরিক্সার দুই শত ব্যাটারি সরবরাহ করার কথা বলে মামলার বাদী শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ ৯লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত নাম পরিচয়ী ও অজ্ঞাত সহ আরও ২০ জনের একটি ভুক্তভোগীর তালিকা এসেছে। অর্থ আত্মসাতকারী এই যুবককে ধরিয়ে দিতে সকলের সহযােগীতা কামনা করেছেন ভুক্তভােগী ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও তাকে ধরিয়ে দিয়ে নিকটস্থ থানায় সােপর্দ করতে পারলে সহযােগিতাকারী ব্যাক্তি বা দলকে নগদ দুই লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলাটির বাদীপক্ষ তথা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতারনার শিকার ব্যবসায়ীরা।

Tag :

ভিডিও

এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

Azam Rehman

জনপ্রিয় সংবাদ

কক্সবাজারে ১০ ব্যবসায়ীর কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা যুবক

আপডেট টাইম ১২:১৪:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

 কক্সবাজার ::

কক্সবাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর এক প্রতারক চক্র। মাত্র দেড় থেকে দুই মাস সময়ের মধ্যে শহরের টেকপাড়া, কালুরদোকান, বাহারছড়া, পাহাড়তলীসহ আরও বেশকিছু আবাসিক এলাকার ছোট-বড় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নানা ধরণের প্রলোভনে দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এখনও নিত্যনতুন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। চক্রটির ফাঁদে পা দিয়ে এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ হয়েছেন একেবারেই নিঃস্ব।

ব্রুনাইয়ের ভিসা সহ কাজ পাইয়ে দেওয়া, অবিশ্বাস্য কম মূল্যে পন্য সংগ্রহ করে দেওয়া, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার লাইসেন্স পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্ধশত বিদেশ গমনেচ্ছু এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে আরও কয়েক কোটি টাকা। শুধু তাই নয়- পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণার করেছে সহজ সরল চাকুরী প্রত্যাশীদের সাথে।

২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর শহরের পাহাড়তলীর হাজী ফরিদ আহমদের মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন দম্পতি পরিচয়ে রাকিবুল ইসলাম রাফি নামে এক যুবক ও তার নারী সঙ্গী সাদিয়া। নিজেকে তিনি পরিচয় দিতেন কখনও গোয়েন্দা আবার কখনওবা পিবিআই পুলিশের কর্মকর্তা’। এ ধরণের ভারী পরিচয় দিয়ে গত দেড় থেকে দুই বছর ধরে আস্থা অর্জন করে নেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিছু ব্যবাসায়ী, নব্য ধনী ও ধনবান হতে চাওয়া স্বপ্নবিলাসী কিছু লোকজনের।

এভাবে করে এবছরের ২৩ অক্টোবর কক্সবাজার শহরের কমপক্ষে ১০ স্বনামধন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও মালিক এবং বিদেশ গমনেচ্ছু নাগরিকের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে প্রতারক চক্রের এই দুই সদস্য। ধারণা করা হচ্ছে সর্বোচ্ছ এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তারা এই টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

এঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতারিত ব্যবসায়ীদের পক্ষে শহীদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তি যেনাে গ্রেফতার এড়িয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ ও আইনপ্রয়ােগকারী সংস্থার কাছে অনুরােধ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাদীপক্ষ।

অন্যদিকে মামলা দায়েরের প্রায় দেড় মাস অতিক্রম হয়ে গেলেও অভিযুক্ত আসামী কিংবা তার সহযোগী কাউকেই আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। এনিয়েও হতাশার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশের আচরণ ও ভুমিকা নিয়েও তুলেছেন প্রশ্ন; ব্যক্ত করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

এ বিষয়ে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার এস আই আবু হাসনাত মোহাম্মদ মাজেদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন- এখনও তদন্ত চলছে। গণমাধ্যমকে জানানোর মতো তেমন কোনো তথ্য নেই। তদন্ত শেষে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলে জানানো হবে।

বিভিন্ন নথি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতারক যুবকের নাম রাকিবুল ইসলাম রাফি। সে চট্টগ্রাম চন্দনাইশের জোয়ারা মােহাম্মদপুর গ্রামের ডাক্তার নুরুল ইসলাম চৌধুরী বাড়ীর সামসুল ইসলাম ও জয়নাব বেগম দম্পতির পুত্র বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ী চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এসব চুক্তির নথি যাচাই করতে গিয়ে যুবকের জাতীয় পরিচয় পত্র সহ সমস্ত কিছু ভুয়ো বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ এই জাল পরিচয়পত্র ও নাম দিয়েই তাকে শহরের সমিতি পাড়ায় অটোরিক্সার গ্যারেজ চালাতে বিদ্যুত সংযোগ সহ মিটার প্রদান করেছে বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ কক্সবাজার।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়- পাহাড়তলীর কচ্ছপিয়া পুকুর এলাকার করিম উল্লাহ নামে এক মুদি দোকানির হাত ধরে প্রতারক রাফি এই এলাকায় আসন গেড়ে বসেছিলেন। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতেন সবকিছু। এই এলাকার বিকাশ এজেন্ট সমির এন্টারপ্রাইজ থেকে ভিন্ন ভিন্ন শতাধিক নাম্বারে টাকা পাঠাতেন। যার একটি তালিকা প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এই এজেন্ট থেকেই পরিশোধ করতেন বিদ্যুত বিলও।

জানা যায়- কথিত রাফি নামে সুদর্শন এই যুবক দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা শহরের ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সহ প্রতিষ্ঠিত সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। এক্ষেত্রে সে কখনও পিবিআই পুলিশের কর্মকর্তা আবার কখনওবা গোয়েন্দা শাখার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছে।

আবার এমনও দেখা গেছে জেলার কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর কাছে সে নিজেকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত কোনো এক সামরিক কর্মকর্তার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে সুসম্পর্ক ও বিশ্বাস গড়ে তুলে। সে সুবাদে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে গেলো বছর জেলা পুলিশের গণবদলির ঘটনাতেও তাকে বদলি হতে হয়নি বলে ভুক্তভোগী কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে গালগল্প ছুড়েন বলে জানিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকেই মূলত লোকজন তার সাথে নানাবিধ আর্থিক লেনদেন করে বলে জানা যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান- প্রতারক রাফি সবার কাছে একটি ভারী ব্যাক্তিত্ব প্রদর্শন করে আস্থা অর্জন করে। এছাড়াও শুরুর দিকে সততা বজায় রেখে চলে। এবং ব্যবসায়ীক লেনদেনেও স্বচ্ছতা দেখায়। এর ভিত্তিতেই তার সাথে প্রত্যেকেই (ভুক্তভোগী) পৃথক পৃথক ভাবে মােটা অংকের লেনদেন করে।

যা ভুক্তভােগীরা থানায় অভিযােগ করতে গেলে পরস্পরের সাথে নাটকীয়ভাবে দেখা হয়ে গেলে জানতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত সবার টাকা যোগ করে সর্বমােট ৯৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অভিযোগকারীদের মধ্যে ঝিলংজার পশ্চিম লারপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আমিনের কাছ থেকে আত্মসাৎ করেছে সর্বোচ্ছ সাড়ে ২৫লক্ষ টাকা। তাকে সয়াবিন তেল ও চাউল সরবরাহ করবে বলে এই টাকা নিয়ে যায়। একই প্রলোভন দেখিয়েতোতকখালীর ডেহেরিয়া ঘোনার রাসেলের নিকট থেকে ১৪ লক্ষ ৬৫ হাজার, পাহাড়তলীর সুমন বড়ুয়ার কাছ থেকে ১৬ লক্ষ ২০ হাজার, অটোরিক্সার লাইসেন্স বন্ধক রাখার কথা বলে একই এলাকার জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ৪ লাখ ৮০ হাজার, আব্দুর রহমান মুন্নার কাছ থেকে ১০ লক্ষ, ভিসা দেওয়ার কথা বলে পদুয়ার ফাহিমের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার, ৫০টি অটোরিক্সার ব্যাটারি সরবরাহ করার কথা বলে ছালামত উল্লাহ খানের কাছ থেকে ২লক্ষ টাকা, অটোরিক্সা বিক্রির কথা বলে মো. করিমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা, অংশীদারী ব্যবসার কথা বলে পটিয়ার হোসাইন মোহম্মদের কাছ থেকে ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, পাহাড়তলীর মুদি দোকানী কাউসারকে কম মূল্যে চাল, সয়াবিন সহ আরও অন্যান্য পণ্য দেওয়ার কথা বলে ৮০ হাজার টাকা, যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই বাড়ির মালিক হাজী ফরিদ আহমদ ও তার পরিবারের অপরাপর সদস্যদের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার ও বকেয়া বাসা ভাড়া সহ মোট ১০ লাখ টাকা এবং অটোরিক্সার দুই শত ব্যাটারি সরবরাহ করার কথা বলে মামলার বাদী শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে নগদ ৯লক্ষ টাকা। এছাড়াও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত নাম পরিচয়ী ও অজ্ঞাত সহ আরও ২০ জনের একটি ভুক্তভোগীর তালিকা এসেছে। অর্থ আত্মসাতকারী এই যুবককে ধরিয়ে দিতে সকলের সহযােগীতা কামনা করেছেন ভুক্তভােগী ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও তাকে ধরিয়ে দিয়ে নিকটস্থ থানায় সােপর্দ করতে পারলে সহযােগিতাকারী ব্যাক্তি বা দলকে নগদ দুই লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মামলাটির বাদীপক্ষ তথা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতারনার শিকার ব্যবসায়ীরা।