স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে:: আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কক্সবাজারে বেড়াতে এসে ধর্ষণের অভিযোগকারী সেই নারী পর্যটক। গতকাল শুক্রবার ওই নারী ও তার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে তোলে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা রহস্যজনক তথ্য দিয়েছেন। দেশব্যাপী আলোচিত এ ঘটনায় শুক্রবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান বলেন, ওই নারীকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তিন মাস ধরে কক্সবাজারে অবস্থানের পাশাপাশি প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পূর্বপরিচয় থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আশিক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। ১৬ মামলার আসামি, মাদকসেবক ও মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাইরের আরেকজন নারীর পরিচয় থাকা সন্দেহজনক। আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
পুলিশ জানায়, আশিকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হত্যা, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতন, অস্ত্র, মাদকসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে। সবশেষ গত ৭ই নভেম্বর একটি ছিনতাই মামলায় পুলিশ আশিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন। আশিকুল ইসলামসহ এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তিনজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন আশিকের দুই সহযোগী ইস্রাফিল খুদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিসোর্টের ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন। এর মধ্যে রিয়াজ উদ্দিনকে গত বুধবার রাতে আটক করে র?্যাব। ঘটনার পর থেকে মামলার অন্য আসামিরা আত্মগোপনে আছে। সন্ত্রাসী আশিকের সঙ্গে রিয়াজের চেনাজানা ও বন্ধুত্ব রয়েছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
গত বুধবার ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ৯৯৯ নম্বরে ওই নারী কল দিয়ে সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, এ কথা সত্য নয়। ওই নারীর কল দেয়ার কোনো প্রমাণ মেলেনি। কল দিলে অবশ্যই পুলিশের সাড়া মিলতো। আরেক প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী দাবি করছেন, তিনি পর্যটক হিসেবে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন। কিন্তু তারা আসলে পর্যটক কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলতে সময় লাগবে। তবে তারা গত তিন মাসে একাধিকবার এখানে এসেছেন, সেটা নিশ্চিত। মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকালে ঢাকা থেকে স্বামী ও আট মাসের সন্তানকে নিয়ে ওই নারী কক্সবাজারে বেড়াতে যান। বিকালে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে ওই নারী সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঘুরতে যান। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় এক যুবকের সঙ্গে ওই নারীর স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে সন্ধ্যায় ওই নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে তিনজন ওই নারীকে ধর্ষণ করে। তারপর একটি রিসোর্টে নিয়ে স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা কক্ষের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে যায়। এসব ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয়, তা নিয়ে ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পরে ওই নারী এক ব্যক্তির সহায়তায় দরজার লক খোলেন। তখন তিনি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। সেখান থেকে বলা হয় থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার জন্য। তারপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় তিনি কল দেন র?্যাব ১৫-তে। পরে র?্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে।
সুজন-এর বিবৃতি
কক্সবাজারে নারী পর্যটক ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এতে বলা হয়, দেশে আরেকটি সামাজিক মহামারির মতো পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ। বিশেষ করে কক্সবাজারের মতো একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রে নারী পর্যটককে গণধর্ষণের ঘটনা আমাদের হতবাক করেছে। সারা দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং দলীয় রাজনীতির যে অপচর্চা চলেছে- এর জের ধরে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটাতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কতিপয় দুষ্কৃতকারী। আমরা নাগরিক সংগঠন সুজন-এর পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টামূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বুধবার রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিন যুবক। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় নারী ধর্ষণ ও ভিডিও তৈরি, সিলেটে বেড়াতে গিয়ে গৃহবধূর ধর্ষিত হওয়া- মাত্র কিছুকাল আগের ঘটে যাওয়া এ ঘটনাগুলো আমরা বিস্মৃত হইনি। সুজন মনে করে, এখন পর্যন্ত অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। ফলে এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটেই চলেছে। বিবৃতিতে সুজন নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা সরকারের প্রতি কঠোর হস্তে ধর্ষকদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা এবং তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজের সচেতন মানুষদেরকে সদা সতর্ক থেকে এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।