আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কম খরচে ঘোরাঘুরির জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় গন্তব্য ভারত। মূলত স্থলপথে যাতায়াত করা সম্ভব বলেই খরচ কমানো সম্ভব হয় অনেকটাই। এছাড়া, শুধু বাংলাদেশি পর্যটক নয়, বৈচিত্র্যময় ভারত সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয়।
ভারতে বাংলাদেশ থেকে ট্যুরিস্ট এবং মেডিকেল ভিসায় সবচেয়ে বেশি মানুষ যায়। ভারতের ভিসা সঠিকভাবে আবেদন করলে প্রত্যাখ্যান হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সমস্যা হচ্ছে, ভিসা প্রত্যাখ্যান করলে ভারতীয় দূতাবাস এর কারণ ব্যাখ্যা করবেনা।
ফলে আপনাকেই নিজে নিজে নিচের কারণগুলো দেখে বুঝে নিতে হবে ঠিক কারণে প্রত্যাখ্যান করা হলো। সেটা বুঝতে পারলে কাগজপত্র ঠিক-ঠাক করে পরের দিনই আবার ভিসার আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনপত্রে ভুল: সবচেয়ে বেশি ভিসা প্রত্যাখ্যানের ঘটনা করে আবেদনপত্র পূরণ করার সময় তুচ্ছ ভুল করার জন্য। যেমন নিজের নামের বানান ভুল হওয়া, পিতার নাম/মাতার নামের বানান ভুল করা, নামের একটি অংশ বাদ পড়া বা অতিরিক্ত যোগ করে ফেলা।
এছাড়া অনেকে পাসপোর্টের তথ্য লিখতে ভুল করে থাকেন। যেমন পাসপোর্ট নাম্বার একটি বেশি/কম দেয়া, নাম্বারের আগের বর্ণগুলো বাদ দেয়া এসব। এধরনের সমস্যার জন্য বাতিল হতে পারে আবেদনপত্র।
নকল ডকুমেন্ট সংযুক্তি: ভিসার আবেদনপত্রের সাথে কোনো ধরনের জাল ডকুমেন্ট দিলে সেই আবেদনপত্র বাতিল হতে পারে। সাধারণত ভিসার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র, অফিসের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, বর্তমান ঠিকানার স্বপক্ষে প্রমাণপত্র, আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এসব কাগজপত্র জমা দেয়া হয়। এর কোনোটি জাল করে দিলে এবং সেটা ধরা পড়লে সেই আবেদনপত্রটি প্রত্যাখান করা হয়।
পাসপোর্টের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অমিল: অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে পাসপোর্টের তথ্যের কিছুটা অমিল আছে।
এধরনের ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়া কঠিন হতে পারে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকে তাহলে সেটা সংশোধন করে নতুন পরিচয়পত্র তুলে তবে আবেদন করবেন। এছাড়া জন্ম সনদের তথ্য ঠিক থাকলে জাতীয় পরিচয়পত্রের পরিবর্তে সেটা দিয়ে আবেদন করতে পারেন।
ইউলিটি বিল: ভারতীয় ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার বর্তমান ঠিকানার স্বপক্ষে একটি প্রমাণপত্র দেয়া লাগে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে যে ইউটিলিটি বিলের কপি দেয়া হয়েছে তার সাথে আবেদনপত্রে দেয়া ঠিকানার মিল নেই। এ কারণেও ভিসা প্রতাখ্যান করা হয়।
ছবি: ভিসার আবেদনের সাথে ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি সদ্যতোলা ছবি দিতে হয়। সদ্য তোলা বলতে তিন মাসের বেশি পুরোনো নয় এমন ছবি বুঝানো হয়।
ভারতীয় ভিসা আবেদনে পাসপোর্ট সাইজের ছবি কিংবা অনেক পুরোনো ছবির দেওয়ার নিয়ম নেই। এছাড়া আগে ভিসা আবেদন করলে পুরোনেনা ছবি ভিসায় থাকে, সেই ছবি দিয়ে আবার আবেদন করেন অনেকে। ছবির কারণেও ভিসা প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
ট্যুরিস্ট ভিসায় ওভারস্টে: ভিসা আবেদন করার সময় আগের ভিসার তথ্য জমা দিতে হয়। আগে কোনো ট্যুরিস্ট ভিসায় যদি ওভার স্টে (ভিসার মেয়াদের পরেও ভারতে অবস্থান) থাকে তবে পরবর্তীতে ভিসা নাও দিতে পারে।
এছাড়া ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে স্থলবন্দর ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটান গেলে, আবেদনপত্র রিফিউজড হবে এবং সেই সাথে পাসপোর্টে সিলও মেরে দিবে যাতে নিকট ভবিষ্যতে ভিসা না পায়। এসব ক্ষেত্রে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে যাওয়া যাবে।
আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ: ভিসার আবেদনের সাথে আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট অথবা ডলার এন্ডোর্স করা থাকতে হয়। ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্টে অন্তত ২০ হাজার টাকা ক্লোজিং ব্যালেন্স থাকা কিংবা পাসপোর্টে ন্যূনতম ১৫০ ডলার এন্ডোর্স থাকা বাঞ্চনীয়। আর্থিক সঙ্গতির প্রমাণে অসঙ্গতি থাকলে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে।
এনওসি: অনেকে অফিস থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) না নিয়ে নকল এনওসি আবেদনপত্রের সাথে জমা দেন। অনেকে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে পেশাগত তথ্য ভুল দেন। এসব কারণে প্রত্যাখাত হয় ভিসা।
পুরোনো পাসপোর্ট: ভারতীয় ভিসার ক্ষেত্রে পুরোনো সব পাসপোর্ট জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। অনেকে পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন বা ভিসা আবেদনপত্রের সময় জমা দেন না।
এসব ক্ষেত্রে ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে। পুরোনো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে থানায় জিডি করে জিডির কপি ভিসার আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
পাসপোর্টের মেয়াদ: পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের কম সময় থাকাটা ভিসা আবেদন প্রত্যাখান হওয়ার অন্যতম কারণ। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট রিনিউ করে ভিসার জন্য আবেদন করা লাগবে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া ভিসা অনলাইন