সারাদিন ডেস্ক:: সবার জীবনেই নানা রকম ঘটনা ঘটে। যে ঘটনাগুলো আনন্দ বা দুঃখ দেয়। একজনের জীবনের ঘটনা হয়তো আরেকজনের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে মিলবে না, দুঃখ-কষ্টগুলোও হয়তো মিলবে না। সবার জীবনেই একটি সাধারণ ঘটনা ঘটে, আর তা হলো প্রেমে পড়া।
যে মানুষের প্রেমে সাধারণত আমরা পড়ি, সে কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই পরিচিতজনের মধ্যেই পড়েন। তার সঙ্গে পরিচয়টা হতে পারে অল্প কিংবা বেশি। তার সঙ্গে সম্পর্ক হতে পারে কাছের কিংবা দূরের, সম্পর্কের ধরনটা হতে পারে হালকা কিংবা গভীর। হতে পারে সে কেবল আমাদের মুখচেনা, নাম জানা। ব্যাপারগুলো সচরাচর এমনই হয়।
চারপাশে খুঁজলে সম্পূর্ণ অপরিচিত কারও প্রেমে পড়ে যাওয়ার ঘটনা আর কয়টাই-বা পাবেন! আর প্রেমে পড়ে যাওয়ার পর, যার প্রেমে পড়লাম তাকে তো জানানো উচিত। প্রেম নিবেদন করার পর হয়তো সে তা গ্রহণ করবে বা প্রত্যাখ্যান, কিন্তু না জানালে সেই না জানানোটা পরে একটা আফসোস হিসেবে থেকে যায়!
যদি ভালো লেগে যাওয়া মানুষ প্রস্তাবে সম্মতি দেয় তখন অপরপক্ষ খুশি হন, কিন্তু সে না করে দিলেই দেখা দেয় যত বিপত্তি! এই সমস্যা দুজনের দিক থেকেই হতে পারে।
ধরুন, রবিন (ছদ্মনাম) আর মিতুর (ছদ্মনাম) কথা। দুজন সহকর্মী, বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন পাশাপাশি ডেস্কে বসে। একসঙ্গে কাজ শুরু করার কিছুদিন পর থেকেই রবিনের ভালো লাগতে শুরু করে মিতুকে। রবিন মিতুকে তার ভালোবাসার কথা জানালে মিতুর উত্তর ছিল ‘না’। এখানেই সমস্যার শুরু। এরপর থেকে রবিন মিতুর সামনাসামনি হতে পারে না। ওর সামনে আসতেই কেমন যেন একটা লজ্জা হয়, হতাশা কাজ করে। এমনকি মাঝে মাঝে ক্ষোভও!
মিতুরও কেমন যেন একটা বিরক্তভাব কাজ করে রবিন কাছাকাছি এলে। মাঝে মাঝে তাঁর মধ্যে অপরাধবোধও কাজ করে, কারণ সে রবিনকে ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ রবিন মিতুকে প্রেম নিবেদন করার আগ পর্যন্তও তাদের দুজনের মধ্যে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক ছিল। এমনকি তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ওই এক প্রস্তাবই যেন নষ্ট করে দিয়েছে সবকিছু।
এ ধরনের ঘটনা কিন্তু চারপাশে হারহামেশাই ঘটে, ঘটছে। এক বন্ধুর পছন্দ হয়ে যায় আরেক বন্ধুকে। আর সেই পছন্দে আরেকজনের মত না থাকলে দেখা যায় নষ্টই হয়ে যাচ্ছে তাঁদের বন্ধুত্ব। কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা অন্য কোথাও অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়, পরে হয়তো সেই পরিচয় রূপ নেয় কোনো সুন্দর সম্পর্কে। সেই মানুষকে যদি ভালো লেগে যায়, আর তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পাওয়া যায়—তবে সেই প্রত্যাখ্যান নষ্ট করে দেয় সেই পরিচয় কিংবা সম্পর্ককে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও কাউন্সেলর অ্যানি বাড়ৈ বলেন, কেউ যখন প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়, তখন এক ধরনের হতাশা, লজ্জা কিংবা ক্ষোভ কাজ করে। আবার যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল তার মধ্যেও বিরক্তি বা অপরাধবোধ কাজ করতে পারে। এখন এই বিরক্তি কিংবা হতাশাকে আমরা তাঁর আর আমার মধ্যকার সম্পর্কে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে দেব তা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ নিজেদের ওপর।
কাউকে প্রেমের প্রস্তাবে ফিরিয়ে দেওয়ার কিংবা কাউকে সেই প্রস্তাব করে সাড়া না পাওয়ার পর নানা ধরনের আবেগীয় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কাজ করে। দৈনন্দিন কাজকর্ম ও সম্পর্কগুলোকে সহজ ও স্বাভাবিক রাখতে, আবেগ ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা অত্যন্ত জরুরি। আইকিউয়ের (ইনটেলিজেন্স কোশেন্ট) মতো ইকিউ (ইমোশনাল কোশেন্ট) বলতেও একটা বিষয় আছে। যার ইকিউ যত বেশি, তিনি তত সহজে ব্যাপারগুলো নিজের আয়ত্তে রাখতে পারেন। আর যাঁদের কম, তাঁরা দেখা যায় প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হতাশ হয়ে যান, কিংবা যাঁর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেন তাঁর প্রতি নানা ধরনের ক্ষোভমূলক আচরণ করেন, যা কি না অনেক সময় ক্ষতিকরও। অপর পক্ষের জন্যও একই কথা খাটে, যা কি না সম্পূর্ণ অনুচিত। এগুলো স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিপন্থী।
দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করতে গেলে, অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে যেমন স্বাভাবিক, তেমনি তাঁদের মাঝে কাউকে আমাদের পছন্দ হতে পারে তাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের এও মেনে নিতে হবে যে ওই মানুষটা আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে অনাগ্রহী হতেই পারেন। এখানেও অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত কিছু ব্যাপার হয়তো থেকে যায়। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, অপর পক্ষের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, সিদ্ধান্তটাকে সম্মান করতে। এবং দুজনের মধ্যকার সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক রাখতে। তাঁর সিদ্ধান্ত যদি ‘না’বোধক হয়, তখন আবেগের বশবর্তী হয়ে তাঁকে একই প্রস্তাব বারবার করে বিরক্ত না করাটাই সমীচীন। আমাদের আবেগাঙ্ক (ইকিউ) বাড়াতে হবে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। তাহলেই এ ধরনের সমস্যা খুব সহজেই আমরা উতরে যেতে পারব, অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই পাব।