ডেস্ক নিউজ :: বিয়ের পর সংসার জীবনে সুখী হওয়া আপনার আমার প্রত্যেকের প্রত্যাশা। জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে সবাই একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিয়ে সংসার পাততে চান। জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত বিয়ে এবং একটা সামাজিক বন্ধন। কত সুখ-স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস আর অবিচ্ছিন্নভাবে অনন্তকাল থাকার অঙ্গীকার নিয়ে সামাজিক বন্ধনের শুরু হয়।
কিন্তু জীবন যত আধুনিক হচ্ছে ততই বাড়ছে সম্পর্ক ভাঙার প্রবণতা। দেখা দিচ্ছে ডিভোর্স। কিন্তু সুন্দর এই সম্পর্কগুলোর এমন চরম পরিণতি কেন ঘটছে এ প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনেই। আধুনিক যুগে ‘দীর্ঘমেয়াদি বিবাহিত জীবন’ যেন কল্পনা হয়ে গেছে। প্রথম ধাক্কাতেই সব বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তবে অধিকাংশরাই দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ দিতে প্রস্তুত থাকেন। বিবাহিত সম্পর্ক টেকাতেও সহায়তার প্রয়োজন হয়।
সততা বা সচ্চরিত্র
বিয়ে বেশ কিছু দিন পর নাকি রোমান্স মরে যায়। এর কারণ হিসেবে কেউ কেউ সততার দ্বায় দেয়। প্রয়োজনের সময় যে কোনো বিষয়ে যতটা সম্ভব মন খুলে, কোন রকম রাগ না রেখে, সচেতনভাবে নিজের চিন্তা ও অনুভুতি প্রকাশ করতে পারলে রোমান্স টিকে থাকবে, টিকে থাকবে সততা।
কোমল বা নম্রতা
কোমল আচরণ সবাই পছন্দ করে। এর ঠিক বিপরীতে একগুয়েমীতা আর জেদ। আর এ কারণে দাম্ভিকতা সম্পর্কে যখন পরস্পর পরস্পরের প্রতি নম্রতা দেয়ায় তখনই বন্ধনে মজবুত হয়। ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে সব সম্পর্ককে সুন্দর পরিনতি দিকে নিয়ে যেতে হয়।
নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা
অনেকেই মনে করেন স্বামী বা স্ত্রী তার অধিকারের জায়গা। তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখা উচিত। এই মনোভাবের জেরে অন্য জন ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে। বিরক্তি থেকে বাড়তে থাকে অস্বচ্ছতাও। বেশিরভাগ ডিভোর্সের অন্যতম বড় কারণ এই ব্যবহার।
সেন্স অব সেপারেশন
বিবাহিত জীবনে অনেক রকম অনুভূতি কাজ করে। কখনও আমরা একাত্ম অনুভব করি, কখনও দূরত্ব। এই সব পোলারাইজিং ইমোশন ঘুরে ফিরে আসে। ক্রমাগত দূরে সরে যাওয়ার অনুভূতি সেন্স অব সেপারেশন তৈরি করে।
আর্থিক সমস্যা
সারা জীবন আর্থিক অবস্থা এক থাকে না। বিবাহিত জীবনে উত্থান-পতনের সাথে মানিয়ে নিতেই হয়। আগেই আর্থিক বিষয় আলোচনা করে নেয়া উচিত। না হলে অনেক সময়ই আর্থিক অনটন, অস্বচ্ছতা বিচ্ছেদ ডেকে আনতে পারে।
ন্যায়সঙ্গত বা সমতা
সমতা মানে সমান। প্রতিটি মানুষ নাকি আলাদা, কথাটি কিন্তু একদম সত্য। তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ভূমিকা আছে। সেক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিনগোরানি মনে করেন, দু’জন দু’জনের হয়ে গেছেন এটায় সমতা। প্রত্যেকেরই সমান গুরুত্ব রয়েছে সুন্দর বন্ধনেরর জন্য। প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে নিজস্ব ইচ্ছা ও চাহিদা ব্যক্ত করে একটা বন্ধনকে করে তুলতে পারে সুন্দর ।
উদার
উদারতা হল দাম্পত্য জীবনের মুল কথা। ভোর বেলা উঠে বউ ঘুম নষ্ট করে অনেক কাজ করে। এটা বিস্তৃত একটি উদারতা। কেউ কেউ মনে করেন শুধুমাত্র উপহার দিতে পারাটা উদারতা। কেউ মনে করে ঘুরতে যাওয়া আর রেস্টুরেন্টে খাওয়ানোটা উদারতা। আবার অনেক অর্থে কার মূল্যবান সময়, শক্তি, এবং প্রচেষ্টা দিয়ে সম্পর্কটিকে জাগিয়ে তোলা হল সবচেয়ে বড় উদারতা!
কৌতূহলী
নিজের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের উর্ধে উঠে পাশের মানুষটির পছন্দের কাজটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ। কিছু অন্তরঙ্গ সময় কাটান। একজন আরেকজনের প্রতি মনোযোগ। এটা সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিবে। দু’জন মিলে কিছু চমৎকার সময় অতিবাহিত করুন।
ন্যায়পরায়নতা বা সমদর্শী
কাছের মানুষটির খারাপ এবং ভালো সবকিছু মেনে নিয়েই তো জীবন। এমন সময় কাটান যেনো একজন অপরজনের কাছে স্পেশাল হয়ে ওঠেন সব ভালো বা খারাপ চিন্তার বাইরে। পুরো মানুষটি যেমন তেমন ভাবেই তাকে সম্মান করে তার প্রতি সুবিচার করুন।
অমায়িক দয়া বা যত্নশীল
এটা আসল বলার চেয়ে করা অনেক কঠিন। দয়া বিষয়টা আসলে অনেকটা নিজের কথা বলে ত অন্যের দিকে তাকানো হয় না, সাধারণ মানুষের সাথে অনুশীলন করা দরকার পরে। সবারই উচিত অন্যের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করা এবং কষ্ট টা ঠিক বোঝা, বিশেষ করে সেই সময়গুলতে যখন আপনি জানেন না বা বুঝতেই পারেন না, যে সে ঠিক কিসের সম্মুখীন হয়েছে, আর তার মোকাবেলা করাটা তার জন্য কত কঠিন। এ সময় বুঝতে পারলে দুজনের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।
স্নেহশীল বা ভালবাসা
অযথা বিতর্ক টেনে নিয়ে যাবেন না। ছাড় দেন ভালবাসার মানুষটাকে। ভালোবাসা আসলে কি তা বুঝতে দিন? ভালোবাসা হল কাপেলদের উত্তর মতে, ঘনিষ্ট হওয়া, যত্নশীল আর পরস্পরের প্রতি জড়িয়ে থাকা মায়া।
নেশা
ধূমপান, অ্যালকোহলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি, নেশা অবসাদ ডেকে আনে। যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবার। নেশাগ্রস্ত স্বামী বা স্ত্রীর সাথে কেউই সংসার করতে চান না। পরিণতি ডেকে আনে ডিভোর্স।
পূর্ণবিকশিত বা পরিপক্কতা
দুজনের বা সংসারে,পরিপক্বতার স্বচ্ছতা অতি জরুরি বিষয়। সম্পর্কের পরিপক্কতা, যা সামনের দিনগুলোতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখাবে। সুবিস্তৃত রাস্তা বা পথ, আমি জানি না ঠিক সামনে কি আছে? তবুও সেই পথকে মেনে নিয়েছি একসাথে হাটার জন্য। দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে বুঝা, দেখাশুনা, একসাথে কাজ করার সময় একজন অপর জনের দৃষ্টিকোণ বুঝতে চেষ্টা করা (বিশেষ করে যখন পরস্পরের দৃষ্টিকোণ সম্পূর্ণ ভিন্ন)।
সুশাসিত বা লালন
অনেকেই মনে করেন, একজনই যত্ন নেওয়া হলে তা দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এটা বড় ধরনের ভুল ধারণা। পরস্পরের প্রতি উৎসাহ প্রদানকারী, যত্নবান, এবং সহযোগী বিষয়টি হল ঠিক এমনই। এক সাথে চলার পথে জীবন পরিচালনের জন্য সহযোগী বা সার্পোটার দুজন ব্যক্তি। প্রতিটি যৌক্তিক কাজে উৎসাহ প্রদান করে যত্নশীলভাবে একজন সঙ্গী অপরজনকে।
মুক্ত বা অবারিত
জীবনের বিভিন্ন সময় নিজেদেরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে মুক্ত মনে। এসব ক্ষেত্রে উভয়পক্ষকে মধ্যমপন্থ অবলম্বন করতে হবে। সহজ উপায়ে অনুভূতি প্রকাশ, অনায়াসে বুঝা যায় এমন কথা বলতে হবে। হাসি কান্নার রহস্য নাই। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, সততা অনুরূপ কিছু এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে উন্মুক্ত সচেতনতা বুঝিয়েছেন। নিজেদের সম্পর্কে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিকোণ খুঁজে তা সন্মান করার পক্ষে সবাই একমত।
সমস্যা থাকলে কথা বলার মাধ্যমে সমাধান করা খুব দরকার। পরস্পরের কথা ও কাজ মনোযোগ সহকারে শুনা এবং দেখা, তা উপলব্ধি করার পর এ ব্যাপারে একমত পোষণ করার মনোভাব গড়ে তুলুন। যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূলমন্ত্র যোগাযোগ। যোগাযোগে দূরত্ব তৈরি হলে সেই সম্পর্ক ভিতরে ভিতরে মরে যেতে থাকে। যে সমসম্যা আলোচনা, খুলে বললে হয়তো মিটে যেতে পারে, সেই সব ছোটখাট সমস্যাই পাহাড় প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়।
মনে রাখবেন দু’জনের মতামতে ভিন্নতা থাকা মানেই সম্পর্কের ইতি নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া ভালো থাকলে সম্পর্ক আরো মজবুত এবং গভীর হয়। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সঙ্গীকে আরো ভালো করে জানার চেষ্টা করুন, প্রয়োজনে সময় নিন।